কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি: নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় ধর্ষণের কারণে অন্তঃসত্ত্বা সুফিয়া খাতুন নামের এক নারীর (৩০) মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার রাতে কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের আতকাপাড়া গ্রামে তার বাবার বাড়িতে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তার বাবার নাম মো. আলাল উদ্দিন। সোমবার পুলিশ ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
এর পনের দিন আগে ধর্ষণের শিকার সুফিয়া খাতুনের বাবা মো. আলাল উদ্দিন বাদী হয়ে নেত্রকোনা আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে মো. সোহেল মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে একমাত্র আসামি করা হয়। সোহেল নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের সাতাশি গ্রামের মো. হাছেন আলী ছেলে।
অভিযোগ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে , সুফিয়া খাতুনের বাবা আলাল উদ্দিন চট্রগ্রামে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। তার সাথে একই কাজ করতেন সোহেল মিয়া নামের আরেক শ্রমিক। একই জেলার লোক হওয়ায় আলাল উদ্দিনের বাসায় আসা যাওয়া করতো সোহেল মিয়া । এরই সুবাদে আলাল উদ্দীনের মেয়ের সাথে পরিচয় হয় দুই সন্তানের জননী সুফিয়া খাতুনের। একপর্যায়ে চট্টগ্রামে থাকাকালীন সময়ে সুফিয়া ও সোহেলের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে একাধিক বার ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের কারণে সুফিয়া আন্ত:সত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ বিষয়টি পরিবারে জানাজানি হলে সুফিয়া খাতুন কে বিয়ে করতে সোহেল মিয়াকে চাপ দেন। পরে সুফিয়া খাতুনকে বলেন, তার আগের স্বামীকে তালাক দিলে পরে তাকে বিয়ে করবে বলেন সোহেল।তার কথা মতো সুফিয়া খাতুন তার স্বামীকে তালাক দিয়ে দেন । এরপর নেত্রকোনা জেলার যার যার বাড়ীতে চলে আসেন তারা। পরে পাশ্ববর্তী উপজেলার ইউনিয়নের সাতাশি গ্রামের সোহেলের বাড়ীতে গিয়ে সামজিক ভাবে বিয়ে করতে চাপ দেন সুফিয়া ও তার পরিবারের লোকজন ৷
এ সময় সোহেল মিয়া সুফিয়া খাতুনকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে বললে সুফিয়া তাতে রাজি হয়নি। পরে গত ১৪ আগস্ট বিকেলে আতকাপাড়া গ্রামে তার বাবার বাড়িতে আসে সোহেল। সুফিয়া খাতুন ও সোহেল মিয়ার কথার কাটাকাটির মধ্যে ওইদিন গর্ভপাত ঘটানোর উদ্দেশ্যে সুফিয়ার তলপেটে লাথি মারে সোহেল। এতে করে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে সেখান থেকে উদ্ধার করে তার বাবা তাকে নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে তার গর্ভে থাকা ৫ মাসের সন্তানের গর্ভপাত হয়। চিকিৎসা শেষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়পত্র দিলে গত ১ সপ্তাহ আগে বাবার বাড়িতে আসে সুফিয়া খাতুন। গত রোববার রাতে তার মৃত্যু হয়। সুফিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে অভিযুক্ত মো. সোহেল মিয়া তার এলাকায় থেকে পালিয়ে গেছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত মো. সোহেল মিয়াসহ পরিবারের লোকজন পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম (পিপিএম) বলেন, খবর পেয়ে সুফিয়ার লাশ উদ্ধার করে সোমবার সকালে ময়নাতদন্ত করার জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।
Leave a Reply