Desk News : ডলার সংকটের কারণে কয়লার দাম দিতে না পারায় সাময়িকভাবে বন্ধ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। কয়লা না থাকায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দু’টি ইউনিটের একটিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
পূর্ণ সক্ষমতায় চললে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট চালাতে প্রতিদিন প্রায় ১৩ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হয়। আর বর্তমানে কর্তৃপক্ষের কাছে ৫০ হাজার টনের মত কয়লা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম।
তিনি বলেন, “বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। আরেকটি ইউনিট হয়তো তিন বা চার তারিখের দিকে বন্ধ হয়ে যাবে কয়লা স্বল্পতার জন্য।” এরপর জুন মাসে অন্তত তিন সপ্তাহ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কার্যক্রম বন্ধ থাকতে পারে বলে অনুমান করেন আলম। এই সময়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ অন্যান্য এলাকাতেও লোড শেডিংয়রে মাত্রা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কীভাবে তৈরি হলো কয়লার সংকট? পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা কিনতে ঋণ দেয় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চীনা অংশীদার চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব এই সংস্থা আর বাংলাদেশের নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ বিনিয়োগে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০২০ সালে।
আর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ করে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। কেন্দ্রের পরিচালনার দায়িত্বও বিসিপিসিএলের ওপরই। শুরু থেকেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা কেনার দায়িত্ব সিএমসির ওপর ছিল বলে বলছিলেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদুল আলম। তারা কয়লা কেনার জন্য অর্থ দিয়ে থাকে এবং প্রতি ছয় মাস পরপর কয়লার টাকা আদায় করে।
আলম বলছিলেন কয়লা আমদানির বকেয়া বিল না দিতে পারার কারণে নতুন করে কয়লা কেনা যাচ্ছে না।
“এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা) বকেয়া হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে তারা যে পেমেন্ট করেছে, সেটি শোধ করার কথা ছিল এই এপ্রিলে। এপ্রিলে আমরা এই টাকা দিতে পারিনি।” এই বকেয়া বিল পরিশোধ না করা হলে সিএমসি আর কয়লা কেনার জন্য টাকা দেবে না। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লাও কেনা সম্ভব হবে না।
ডলার সংকটের কারণে কয়লার বকেয়া বিল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান মি. আলম। সপ্তাহ দুয়েক আগে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে ডলারের কিছুটা সংকট থাকায় কয়লার টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সেসময় তিনি আশা প্রকাশ করেছিলেন যে ‘সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই’ এই সমস্যার সমাধান হবে বলে।
সংকটের সমাধানে কী করা হচ্ছে? চীনা প্রতিষ্ঠান সিএমসিকে এরই মধ্যে ৬০ মিলিয়ন ডলার ফেরত দেয়া হচ্ছে বলে বলছিলেন বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদুল আলম।
তিনি বলছিলেন, “ বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকার ও আমরা এ মাসের ৩১ তারিখের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলার তাদের ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। এরই মধ্যে ৬০ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট করা হয়েছে।” “আমরা আশা করছি এর মাধ্যমে আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের কয়লা কেনার অর্থ দিতে রাজি করতে পারবো।” সিএমসির সাথে এই বিষয়ে আলোচনা শেষে কয়েক দিনের মধ্যেই তারা এলসি খুলতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন মি. আলম। “এলসি খোলার পর জাহাজ যাবে, কয়লা লোড হবে, তারপর আসবে, আনলোড হবে – সব মিলিয়ে কমপক্ষে ২৫ দিন লাগবে।”
লোডশেডিংয়ে কতটা প্রভাব পড়বে : বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিদিন গড় বিদ্যুতের চাহিদা ১৩ থেকে সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। এর বিপরীতে গড়ে প্রতিদিন ১২ থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও সঞ্চালন ও সরবরাহ লাইনের অভাব থাকায় গ্রাহকদের কাছে ঠিকমতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় না। তাই অনেক এলাকাতেই গ্রাহকরা বিদ্যুৎ সেবা ঠিকমতো পান না।
চালু হওয়ার পর থেকে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র গত তিন বছরে প্রতিদিনই এর পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। তাই এই কেন্দ্রটি বন্ধ থাকলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেন পিডিবির একজন পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা শামীম হাসান।
তিনি বলছিলেন, “এই সময়ের মধ্যে যদি বৃষ্টি হয় তাহলে হয়তো বিদ্যুতের ওপর তেমন চাপ পড়বে না, কারণ বৃষ্টির সময় চাহিদা কম থাকে। কিন্তু যদি আবহাওয়া পরিষ্কার থাকে আর তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপর থাকে, তাহলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কিছুটা বাড়বে।”
সেক্ষেত্রে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যেসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, সেসব এলাকায় অপেক্ষাকৃত বেশি চাপ পড়তে পারে। আবার ভারসাম্য রক্ষা করতে সারা দেশেও লোডশেডিংয়ের মাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানান শামীম হাসান।
Leave a Reply