বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১৮ অপরাহ্ন

লালমনিরহাটে আবারও বন্যার শঙ্কা, তলিয়েছে রাস্তাঘাট ও ফসলিজমি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট : শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ২৬ পঠিত

লালমনিরহাট প্রতিনিধি : টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে লালমনিরহাটের চরাঞ্চল ছাড়াও কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। গত দুইদিনে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি বন্দি হয়ে পড়া নিম্নাঞ্চল গুলোর গ্রামীণ রাস্তাঘাট, কৃষকের ধান, বাদাম, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। আর বাড়িঘরে পানি থাকায় খাওয়া, ঘুমসহ সকল কাজে সৃষ্টি হয়েছে ভোগান্তির।শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১.৮৩ মিটার (স্বাভাবিক ৫২.১৫ মিটার)। যা বিপদসীমার ৩২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে দুপুরে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ বার্তায় লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার রায় বন্যাের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটির বাসিন্দা কৃষক রফিকুল ইসলাম(৫০) বলেন, গত দুইদিন ধরে বাড়িতে পানি ওঠায় চুলা জ্বালাতে পারছি না। তাই খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছি। দিনে একবার রান্না করাই কষ্টকর। এছাড়া গৃহপালিত পশুর খাদ্য জোগানেও বেগ পেতে হচ্ছে। একই এলাকার নদী তীরবর্তী বাসিন্দা মজিবর রহমান (৫২) বলেন, গত দুইদিন ধরে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানির ভয়ংকর শব্দের রাতের ঘুম হারিয়ে যায়। গতরাতে তার প্রতিবেশীর বাড়ির একটি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। আদিদমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবরধন এলাকার বাসিন্দা পচা মিয়া (৪৫) বলেন, তিস্তার ভয়াল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে গত ১৫ বছরে কতজন এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়না। এখন তিস্তায় পানি বাড়লেই আমাদের এলাকায় প্রবেশ করে। বাড়ি ঘর, রাস্তায় পানি থাকায় চলাফেরাসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়।

এখন সরকার পরিবর্তন হয়েছে, দেশে নতুন সরকার এসেছে। জেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দি থাকা পরিবারের লোকজনের দাবি, এই অন্তবরর্তিকালীন সরকারের  যেন তিস্তা চলাঞ্চল বাসির জন্য তিস্তায় চিরস্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা করেন। নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে আসায় অল্প পানিতে বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আর এই সমস্যা সমাধানে তিস্তা নদী খনন বা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন খুবই দরকার বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।লালমনিরহাটের তিস্তা, ধরলা,স্বর্নামতিসহ বিভিন্ন নদ-নদীর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার রায় জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে রংপুর বিভাগের তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি গত দুইদিনে সমতল বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি আরও জানান, আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ২৪ ঘন্টায় অতি ভারী বৃষ্টিপাতের (৮৯ মি.মি.) সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পরবর্তী ২ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে। এর প্রেক্ষিতে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে পরবর্তী একদিন পর্যন্ত তা স্থিতিশীল এবং এর পরদিন থেকে তা হ্রাস পেতে পারে।এই অবস্থায় আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলার তিস্তা নদীর পানি সমতল সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে এবং জেলার নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ছাড়াও কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তাসহ লালমনিরহাটের সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে পানি দ্রুত নেমে যাবে। নদীতে পলি পড়ে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে আাসায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।তিনি বলেন, পানি কমে গেলে কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিতে পারে। নদী ভাঙন ঠেকাতে জরুরি আপদকালীন কাজ হিসেবে জিও ব্যাগ ফেলা হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
© All rights reserved © 2023 digantabangla24.com