কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের গুড়াডুবি বদ্ধ জলমহালটি দখল করে মাছ ও বাঁশ লুটপাট করে নিয়ে গেছে দুস্কৃতিকারীরা। প্রতিবাদ করলে মারধর করা হয় ইজারাদারদের। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দিলেও অভিযোগটি নথিভুক্ত করছেন না পুলিশ বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তবে পুলিশের দাবি অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে। রোববার দুপুরে উদয়পুর বাজারে বড়খাপন পুটিকা মিলন মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির ব্যানারে এক মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে ইজারাদারগণ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দুইশতাধিক লোকজন অংশ নেন।
ইজারাদার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গুড়াডুবি বদ্ধ জলমহালটি ১৪২৯ সালে ছয় বছরের জন্য ইজারা দেন উপজেলা প্রশাসন। খাজনা ভ্যাটসহ প্রতিবছর ১৮ লাখ ২৬ হাজার ৮৪১ টাকা করে জলমহালটি ইজারা নেন বড়খাপন পুটিকা মিলন মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির লোকজন। বছরের শুরুতেই টাকা পরিশোধ করে জলমহালটি রক্ষণা-বেক্ষণ করে আসছে ইজারাদারগণ। তবে চলতি বছরের ২৮ মে মাইকিং করে উক্ত জলমহালটি উন্মুক্ত ঘোষনা করেন সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহী।
এরপর থেকেই দুস্কৃতিকারীরা জলমহালটিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করে মাছ-বাঁশ ও ডালপালা লুটপাট করে জলমহালটি তাদের দখলে নিয়ে যায়। প্রতিবাদ করলে মারধর করা হয় ইজারাদারদের। হুমকিও দেওয়া হয় প্রাণনাশের। এ নিয়ে গত শুক্রবার রাতে মোহাম্মদ রুবেল, আজিজুল বিশ্বাস, রুকন খন্দকার, নগেন্দ্র দাস, রায়ধন দাস, আরশাদ মিয়া, আজিম উদ্দিনসহ ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে কলমাকান্দা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু অভিযোগটি নথিভুক্ত না করে ওসি মোহাম্মদ লুৎফুল হক মীমাংসার কথা বলেন।
দায়েরকৃত মামলাটি নথিভুক্ত করে দুস্কৃতিকারীদের আইনের আওতায় আনা ও বৈধ জলমহালটি ফেরৎ পাওয়ার দাবি জানিয়ে রোববার মানববন্ধন করে ইজারাদার ও বড়খাপন পুটিকা মিলন মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির লোকজন। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে স্থানীয় বাজার প্রদক্ষিণ করে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বড়খাপন পুটিকা মিলন মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি সভাপতি ইজারাদার আশ্রব আলী ও সাধারণ সম্পাদক মো. ফৌজদার মিয়া, রফিকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, রনি তালুকদার, সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল মিয়া, আলতু বিশ^াস, কাসেম মন্ডল, হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
এ সময় বক্তরা বলেন, আমরা বছরের শুরুতেই সরকারকে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ টাকা করে অগ্রিম দিয়ে দুই বছর ধরে জলমহালটি ভোগ করে আসছি। প্রায় তিন মাস আগে সাবেক এমপি মোশতাক আহমেদ রুহী আমাদের দাখিলকৃত টাকা ফেরৎ না দিয়েই বে-আইনিভাবে মাইকিং করে জলমহালটি উন্মুক্ত ঘোষনা করেন। এরপর থেকেই এলাকার দুস্কৃতিকারীরা আমাদের বৈধ জলমহালটি দখল করে মাছ-বাঁশ ও ডালপালা লুট করে নিয়ে যায়। আমারা প্রতিবাদ করতে আমাদের মারধর করে হুমকি দেয় জলমহালে গেলে মেরে গুম করে ফেলবে। পরে দুস্কৃতিকারীদের নামে থানায় অভিযোগ দিলেও ওসি তা আমলে না নিয়ে উল্টো মীমাংসা হয়ে যেতে বলেন। আমরা এর প্রতিকার চাই।
এ বিষয়ে জানতেে চাইলে অভিযুক্তের মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত মোহাম্মদ রুবেল অস্বীকার করে বলেন, এটার সাথে আমার কোন সংপৃক্তা নেই। তবে স্থানীয় একটি মহলের সাথে জলমহলের সমিতির লোকজনের বিরোধ চলছে।
এব্যাপারে জানতে সাবেক সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহীর মুঠোফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তাই এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলমাকান্দা থানার ওসি মোহাম্মদ লুৎফুল হক বলেন, অভিযোগটি পেয়েছি, তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply