রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৯ অপরাহ্ন

কোটা আন্দোলনে  শিক্ষার্থী সহ কলমাকান্দার ২জন নিহত

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট : শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৪
  • ৭৫ পঠিত

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই বাসা থেকে বের হন ১৬ বছর বয়সী আহাদুন। তখনই রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় শুরু হয় সংঘর্ষ। সেই সংঘর্ষের খবর শুনে  তাকে খুঁজতে বের হয়ে যান বাবা মুজিবুর রহমান। কিন্তু দশম শ্রেণীর পড়ুয়া আহাদুন আর বাসায় ফিরে আসেনি। আর দুদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি  করেও পাওয়া যাচ্ছিলনা তাকে। তখনও আহাদুনের বাবার বিশ্বাস ছিল তার আদরের ছেলেকে ফিরে পাবেন তিনি। কিন্তু তার আশায় বেদনার ছায়া হয়ে ধরা দিলো তার ছেলে।

দুইদিন পর আহাদুনে রক্তমাখা দেহটা পাওয়া গেল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে। লাল শার্ট পরা ছেলেটি এখন কফিনবন্দি হয়ে রক্তের লাল হয়ে আছে। তার একটা গুলি কানের এক পাশ দিয়ে ঢুকে ওপাশ দিয়ে বের হয়ে যায় গুলি। আরেকটি গুলি তার পায়ে এসে লাগে। আহাদুনের শরীরে এমন  ক্ষতবিক্ষত চিহ্ন দেখে স্তব্ধ হয়ে পড়ে তার পরিবার।

নিহত আহাদুন কলমাকান্দা  উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মজিবুর রহমানের ছেলে ও ঢাকা উত্তর বাড্ডা ইউসেফ হাজী সেকান্দর আলী টেকনিক্যাল স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

নিহতের পরিবারের দাবি, তারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আন্দোলনে সংঘর্ষের সময় পরিস্থিতি শিকার হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে আহাদুন।

বাবা মজিবুর রহমান জানান, চার সন্তানের মধ্যে আহাদুন তৃতীয়। ছেলের দুইটা গুলি লেগেছে। একটি গুলি কানের এক পাশ ঢুকে ওপাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।  আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল, বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে। ছেলেটাকে মেরে সব শেষ করে দিল। ওই দিন ছেলের লাশের খোঁজ পেলেও হাসপাতাল থেকে লাশ বের করতে পারেননি। পরের দিন ময়নাতদন্তসহ সকল কাজ সম্পন্ন করে মর্গে থেকে লাশ  বের করেন।

নিহত আহাদুনের চাচা আবুল হোসেন বলেন, আহাদুন বিভিন্ন নষ্ট ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ঠিক করতে পারতো। সেই সঙ্গে বাবার দোকানে সহযোগীতা করতো। দুইটা গুলিতে সব শেষ হয়ে গেছে। এতটুকু ছেলে কার কী ক্ষতি করেছিল? ঢাকা থেকে  ভাতিজার লাশ এনে কলমাকান্দা উপজেলার নিজ গ্রামের সার্বজনীন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

আহাদুনের মতোই ১৯ জুলাই একই অবস্থা ১৫ বছর বয়সী রিকশাচালক মো. সোহাগ মিয়ার। পরিবারের অভাব অনটনের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে বাবার সাথে সংসারের হাল ধরতে ভাড়ায় রিকশা চালাতো সোহাগ। ওইদিন ঢাকার নয়াবাজার এলাকার মসজিদে তার বাবাকে  সাথে নিয়ে জুমা নামাজ আদায় করে সোহাগ। থমথমে ঢাকা শহরের চিত্র তখনও বুঝে উঠতে পারেনি সে। পরে পরিবারে সাথে দুপুরের খাবার খেয়ে জীবন জীবিকার তাগিদে রিকশা নিয়ে পড়েন রাজধানীর নয়াবাজার নামক এলাকায়। ঠিক তখনই শুরু হয় সংঘর্ষ। জীবন বাঁচাতে রিকশা রেখে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন সোহাগ। ঠিক তখনই বুলেটের নির্মম আঘাত এসে লাগে তার কানে। মুহূর্তেই উড়ে যায় তার একটি  কান। ছেলের এমন সংবাদ শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তার বাবা মো. শাফায়েত মিয়া। ততক্ষণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সোহাগ। ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে তার বাবা-মাসহ স্বজনরা।

নিহত মো. সোহাগ মিয়া কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের বড়খাপন গ্রামের মো. শাফায়েত মিয়ার ছেলে। বাবা-মা,ভাইবোনসহ ঢাকার নয়াবাজার এলাকার থাকতে।

নিহত সোহাগের বাবা মো. শাফায়েত মিয়া জানান , আমাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ের সন্তানের মধ্যে সোহাগ বড় সন্তান। অভাব অনটনের কারণে পরিবারের মাঝে স্বচ্ছলতা ফেরাতে দীর্ঘ কয়েক বছর আগে সপরিবারে ঢাকায় যান তিনি । পরে সেখানে রিকশা চালাতে শুরু করেন সোহাগের বাবা। আমি শারিরীক ভাবে অসুস্থ হলে সংসারের হাল ধরে সে।  ওইদিন   রিকশা নিয়ে বের হয় সোহাগ । একটা গুলিতে সব শেষ হয়ে গেছে । এতে আমার সন্তানের কি অপরাধ ছিল ? ঢাকা থেকে সন্তানের লাশ নিয়ে কলমাকান্দা উপজেলার নিজ গ্রামে সার্বজনীন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
© All rights reserved © 2023 digantabangla24.com