[ad_1]
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, আওয়ামী লীগ জোট করলেও ভোট চায় শুধু নৌকার জন্য। শরিক দলগুলোর প্রতীকের জন্য ভোট চাওয়া হয় না।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে ওয়ার্কার্স পার্টির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ তোলেন।
তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনসভা করে গিয়েছেন কয়দিন আগে। ভোট চেয়েছেন। কার ভোট? নৌকায় ভোট চেয়েছেন। ঠিকই আছে। তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, তিনি নৌকায় ভোট চাইতেই পারেন। কিন্তু তিনি একই সঙ্গে ১৪ দলের জোটনেত্রী। তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ১৪ দল একত্রে নির্বাচন করবে। এটা আমার কথা নয়, গণভবনে ১৪ দলের সাথে সভা করে তিনি বলেছেন। কিন্তু, ভোট চাওয়ার বেলায় নৌকা, হাতুড়ির কোনো জায়গা নাই। ভোট চাওয়ার বেলায় নৌকা, মশালের কোনো জায়গা নাই। সেখানে কোদালের কোনো জায়গা নাই। তাহলে হলো? এই ১৪ দলের ঐক্যজোট হলো? ওই নির্বাচন কী হলো? অত্যন্ত দুর্ভাগ্য আমাদের।’
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘এই সেদিনও ঠাকুরগাঁওয়ে উপনির্বাচন হয়ে গেল। আমাদের বলা হলো, ওয়ার্কার্স পার্টিকে একটা সিট ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা খুশি হলাম। আমরা হাতুড়ি নিয়ে নির্বাচন করলাম। কিন্তু, কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগের এক বন্ধুও এলো না। আমাদের কাছে ভিডিও আছে, যেখানে বিজয়ী প্রার্থী ঘোষণা করছে, ওই নৌকার মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে বলেই আমি লাঙ্গলে জয়লাভ করেছি। কেবল কী তাই? সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ভোট ভাগ করা হয়েছে। দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে যাতে ভোট ভাগ হয়ে যায়। এই যে নগ্ন খেলা, আর যাই হোক এটা জোটচর্চা নয়। এটা আর যাই হোক, জোটের রাজনীতি হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে হাতুড়ি মার্কা নিয়ে আমরা যেসব সিট জয়লাভ করেছিলাম, ২০১৮ সালে সেসব সিট আমাদের ভাগে এসেছিল। আমরা পেয়েছিলাম। কিন্তু, আমাদের বলা হলো, নৌকা নিয়ে নির্বাচন করো। কিন্তু নির্বাচন যখন করতে গেলাম, দেখলাম—নৌকার মাঝিরাই নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে। নৌকার মাঝিরাই নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে কেউ জাতীয় পার্টিকে জিতিয়েছে, কেউ বিএনপিকে জিতিয়েছে। এটা আমার কথা না। এটা ইতিহাসের কথা।’
ওয়ার্কার্স পার্টির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘যে রাজনৈতিক বিজয় আমরা অর্জন করেছিলাম, তা ছিল ঐক্যবদ্ধ শক্তি। ঐক্যের বিজয়। সেই বিজয় ছিল ১৪ দলের। আমরা কি ভুলে গেছি? বিএনপি-জামায়াত জোট ২১ আগস্ট কী গ্রেনেড হামলা করেছিল। আমরা ভুলে যাইনি। আপনারা আমাদের বলেছিলেন—একসাথে আন্দোলন, একসাথে নির্বাচন, একসাথে সরকার। আমাদের কোনো দাবি ছিল না। আপনারাই বলেছিলেন। একসাথে আন্দোলন করেছি, একসাথে নির্বাচনও করেছি। কিন্তু, যখন সরকার গঠনের প্রশ্ন আসলো, আমরা হোঁচট খেলাম। তারপরও আমরা ঐক্যকে রক্ষা করেছি। ওই হেফাজত যখন ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় অভ্যুত্থানের চেষ্টা নিয়েছিল, এই ওয়ার্কার্স পার্টি সেদিন আওয়ামী লীগ সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল, আর কেউ নয়। এমনকি ওই মহাজোটের এরশাদ সাহেবেরা হেফাজতকে পানি খাইয়েছিল, তাদের কাছে গিয়ে তাদেরকে তোষামোদ করেছিল।’
রাজনীতির জন্য এখনও ১৪ দল প্রাসঙ্গিক, দাবি করে রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, ‘আমরা জোট চাই, এখনও আমরা মনে করি, ১৪ দল প্রাসঙ্গিক। কারণ, আমাদের সামনে শত্রু বিভীষণ। এই ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করা এ দেশের মানুষের কাছে কিছু না। কিন্তু, আজকে যখন দেখি, আমার ১৪ দলের মূল শরিক। আওয়ামী লীগ ১৪ দলকে কিছু না জিজ্ঞেস করেই, ১৪ দলকে কিছু না জানিয়েই যদি মনে করে থাকে, এককভাবে তারাই এ শক্তির মোকাবিলা করবে, তাহলে তারা ভুল করছে। তারা ভুল করবে। কারণ, এই একইভাবে ১৯৯৬ সালে, একই ষড়যন্ত্রের মুখে তারা পড়েছিল ২০০১ সালে। আমরা তো ভুলে যাইনি।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত আগুনসন্ত্রাস করেছিল, নির্বাচন বর্জন করেছিল, আমাদেরকে মন্ত্রিত্ব আগে দেওয়া হলো। আমরা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে আমরা নির্বাচনকালে মন্ত্রিত্বে যোগদান করেছি। নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এমনকি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের দায় নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছি আমরা। ভুলে গেছেন সব এখন? সব ভুলে যান! ভুলে যান! ২০১৮ সালে আরেকবার যখন নির্বাচন হলো, তখন একইভাবে এই ওয়ার্কার্স পার্টি দাঁড়িয়ে থেকে আপনাদের সেই লড়াইকে জয়ী করেছে। আপনাদের পাশে তখন আর কেউ ছিল না। আজকে আবার সেই নির্বাচনের প্রশ্ন সামনে।’
রাজশাহী ওয়ার্কার্স পার্টি এই সমাবেশের আয়োজন করে। এতে রাজশাহী বিভাগের আট জেলা থেকে ৪-৫ হাজার নেতাকর্মী যোগ দেন। প্রধান বক্তা ছিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। আরও বক্তব্য দেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য আমিনুল ইসলাম গোলাপ ও আনিসুর রহমান মল্লিক।
রাজশাহী নগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু ও জেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা।
[ad_2]
Source link
Leave a Reply