শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪৪ অপরাহ্ন

এই মাত্র পাওয়া

সিরিয়া : মাত্র ১২ দিনে বাশারের ২৪ বছরের শাসনামলের অবসান

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট : সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ২০ পঠিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিদ্রোহীদের ভয়ে আজ রবিবার ভোরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে পালিয়ে যান। এরপর দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালিও বিদ্রোহীদের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের দীর্ঘ ৫৪ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান হয়। মাত্র ১২ দিনেই অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন করলেন বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। গোষ্ঠীটির প্রধান নেতা মোহাম্মদ আল-জোলানি এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যদিও ২০১১ সাল থেকেই স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের দমনে কঠোর পন্থা অবলম্বন করেন বাশার। এরপর বিক্ষোভকারীরা সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেন। এতে করে দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।

পরবর্তীতে বাশার আল আসাদকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে রাশিয়া, ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহ। এতে বিদ্রোহীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে যাওয়া, ইরান তার চিরশত্রু ইসরায়েলের দিকে মনোনিবেশ ও ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার ব্যস্ত থাকার সুযোগে বিদ্রোহীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠে।

এরই ধারাবাহিকতায় মোহাম্মদ আল-জোলানির নেতৃত্বে হায়াত তাহরির আল-শাম গত ২৭ নভেম্বর হঠাৎ করেই বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। সেদিন থেকেই শুরু হয় দ্বিতীয় বড় শহর আলেপ্পো দখল অভিযান।

অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যান বিদ্রোহীরা। মাত্র ১২ দিনে পতন ঘটালেন আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের শাসনামলের। আর বাশার আল আসাদের ২৪ বছরের ক্ষমতার। তাদের দ্রুত গতির এই অভিযান আসাদ, তার মিত্র এবং বাকি বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে।

মূলত ২৭ নভেম্বর দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোতে বিদ্রোহীদের আক্রমণ শুরু হয়। এরপর ১ ডিসেম্বর আলেপ্পোর কুর্দি যোদ্ধাদের দখলে থাকা কিছু সংখ্যাগরিষ্ঠ কুর্দি এলাকা বাদে বাকি অংশ নিজেদের দখলে নেয় বিদ্রোহীরা। এরপরে ৫ ডিসেম্বর সিরিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর হামা দখল করে। এরপর ৭ ডিসেম্বর আসাদ সরকার নিয়ন্ত্রিত রাজধানী দামেস্ক ঘেরাও এর অভিযান শুরু করে বিদ্রোহীরা।

রবিবার ভোরে সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমসের নিয়ন্ত্রণ এবং দামেস্কে প্রবেশের ঘোষণা দেয় বিদ্রোহীরা। বিদ্রোহী যোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে রাজধানী থেকে ব্যক্তিগত বিমানে করে পালিয়ে যান বাশার আল-আসাদ। তবে তিনি কোথায় গিয়েছেন রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। এরপরই সিরিয়াকে ‘মুক্ত’ ঘোষণা এবং রাজধানী দামেস্কের পূর্ণ দখল নেন বিদ্রোহীরা।

বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসান হয়েছে জানিয়ে, রবিবার আর্মি অফিসারদের উদ্দেশে এ ঘোষণা দেন দেশটির সেনাবাহিনীর কমান্ড।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের পর স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ মুক্ত হল দেশটি। দেশের অভ্যন্তরের সংঘাত নিরসনে দীর্ঘ সময় আসাদের পাশে ছিল রাশিয়া এবং ইরানের মতো শক্তিশালী মিত্ররা। তবে শেষ মুহূর্তে মিত্রদের কোনও ভূমিকা দেখা যায়নি।

বাশার আল-আসাদের পালানোর খবরে দামেস্কের রাস্তার রাস্তায় উদযাপন দেখা যায়। বিদ্রোহীরা বলছে, সিরিয়ায় বাশারের শাসনের অবসান দেশটির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

এক বিবৃতিতে বিদ্রোহীরা জানায়, “বাথিস্ট শাসনের অধীনে পাঁচ দশকের নিপীড়ন এবং ১৩ বছরের অপরাধ, অত্যাচার এবং বাস্তুচ্যুতি এবং দীর্ঘ সংগ্রামের পরে, সব ধরনের দখলদার বাহিনীর মোকাবিলা করে, আমরা আজ ঘোষণা করছি, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ সেই অন্ধকার যুগের সমাপ্তি এবং নতুন যুগের শুরু হলো। এটি সিরিয়ার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা।”

এদিকে দামেস্ক দখলের পর নতুন সিরিয়াকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জায়গা বলে ঘোষণা করেছে বিদ্রোহীরা। সেখানে ন্যায়বিচারের জয় এবং সব সিরিয়ানদের মর্যাদা রক্ষা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

এছাড়া বিভিন্ন শহরের দখল নেওয়ার পর বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্র: বিবিসিরয়টার্স ও আল জাজিরা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
© All rights reserved © 2023 digantabangla24.com