দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা এলাকার পাহাড় ও সমতল ভুমিতে বাস করছেন বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়। এর মধ্যে গারো, হাজং, হদি উল্লেখযোগ্য। ঐতিহাসিক হাজং বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন, টঙ্ক আন্দোলন সহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছের হাজং সম্প্রদায়ের মানুষ গুলো। দেশের সকল কিছুতেই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও হাজং সম্প্রদায়ের জীবন-মান উন্নয়নে এখনো লাগেনি তেমন কোন ছোঁয়া।
এই সম্প্রদায়ের জীবন-মান উন্নয়নে নিজের ক্ষুদ্র চাকুরীর আংশিক বেতন ও টিউশনের টাকা বাঁচিয়ে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও সুনামগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন্ গ্রামে গ্রামে গিয়ে স্কুল-কলেজে পড়–য়া হাজং সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের নেতৃত্ব উন্নয়নমুলক প্রশিক্ষণ, ফলদ বৃক্ষরোপন, সব্জি চাষ সহ জীবন মান উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন অন্তর হাজং নামের এক যুবক।
অন্তর হাজং দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগাড় ইউনিয়নের খুজিগড়া গ্রামের রহেন্দ্র হাজং এর ছেলে। সামাজিক উন্নয়নে ওইসকল কাজের পাশঅপাশি বিলুপ্তপ্রায় হাজংদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি নিয়েও কাজ করছেন তিনি। বাংলা ভাষার পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আছে অন্তত ৪০টি ভাষার। এর মধ্যে রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে অনেক ভাষাই হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অন্তর হাজং। তিনি সীমান্তের গ্রামগুলোতে গিয়ে নিজ গোত্রের বিভিন্ন বয়সিদের হাজং ভাষা শেখাচ্ছেন। সেইসঙ্গে তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই সম্প্রদায়ের ছেলে, মেয়ে, গৃহিণী থেকে বিভিন্ন বয়সি ২৫ থেকে ৩০ জন বাড়ির উঠানে বসে হাজং ভাষা চর্চা করছেন। কখনো গল্পের ছলে আবার কখনো হাজং ভাষায় গীত (গান) করছেন, কেউবা কবিতা পড়ছেন। বাকিরা শুনছেন। শেষে গীত, কবিতা, গান, গল্পে থাকা হাজং ভাষার শব্দগুলো নিয়ে চলছে আলোচনা। কেউবা লিখেও রাখছেন উদ্ভাবন হওয়া শব্দ গুলো।
এ নিয়ে মায়ের ভাষা টিকিয়ে রাখতে ছুটেচলা যুবক অন্তর হাজং যুগান্তর কে বলেন, মায়ের মুখের ভাষাকেই আমরা এখন ভুলতে বসেছি। প্রায় পাঁচ বছর আগে এ নিয়ে ভেবেছি কি হবে আমাদের। তাই নিজেদের ভাষা রক্ষার জন্য প্রতিজ্ঞা করি। প্রথমে দুর্গাপুরের বগাউড়া, গোপালপুর, ছনগড়া, আড়াপাড়া, বিজয়পুর, লক্ষ্মীপুর, ভবানীপুরসহ সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামগুলোতে হাজং ভাষার চর্চা করানো শুরু করি এবং পরবর্তিতে ময়মনসিংহ, শেরপুর ও সুনামগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন্ গ্রামে গ্রামে গিয়ে ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি সমাজ উন্ন্য়নে বিভিন্ন ধরনের কাজ শুরু করি। আমাদের ছোট ভাই বোনদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে ছুটে চলি গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।
তিনি আরো বলেন, নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। হাজং ভাষায় বলা শব্দগুলোকে সবার সঙ্গে পরিচিত করার মাধ্যমেই চলছে এই ভাষা চর্চা। আমি আমার সাধ্যমতো ভবিষ্যতেও এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো। গবেষণার মাধ্যমে বর্ণ তৈরি করে হাজং ভাষা রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ দাবিও করেন তিনি।
Leave a Reply