দুর্গাপুর(নেত্রকোনা)প্রতিনিধি : হ্যালো বাবা তুমি কিন্ত আসার সময় একটি কালো ঘড়ি নিয়ে আসবে। তোমার কাছে আর কিছুই চাইনা। তুমি আমার জন্য দোয়া করো, আমি পড়াশোনা শেষ করে দেশের কল্যানে কাজ করবো। কালো ঘড়ি আর পড়া হলো না। বড় কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলো রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. উমর ফারুক এর। গত ১৯ জুলাই দুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজধানীর লক্ষ্মীবাজার এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।
দুইদিন পর ২১ জুলাই (রোববার) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের সিংহা এলাকায় তার গ্রামের বাড়ি নেওয়া হয়। সেখানে ওইদিন রাত সাড়ে ১০টায় জানাজা শেষে দাফন করা হয় মেধাবী শিক্ষার্থী উমর ফারুক কে। গ্রামের বাড়িতে ছেলেকে কবরে চিরনিদ্রায় রেখে, এখনো কান্নায় ভেঙে পড়ছেন বাবা-মা। বড় ভাইকে হারিয়ে শোকে যেন পাথর ছোট ভাইও। উমরের এমন মৃত্যুতে হতবাক আত্মীয় স্বজনসহ পুরো এলাকার মানুষ।
জানা গেছে, পরোপকারী মানুষ ছিলেন উমর ফারুক। মূমুর্ষ রোগীদের রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচাতে বন্ধুদের সাথে নিয়ে গঠন করেছিলো ব্লাড ডোনার সোসাইটি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ওই সংগঠনের প্রধান ছিলেন ওমর ফারুক। হাজারো সংকটাপন্ন মানুষকে রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। পড়াশোনা চালাতে সে ঢাকায় চলে গেলেও সংগঠনের কাজ চলমান রেখেছেন নিয়মিত।
উমর ফারুকের ছোট ভাই আবদুল্লাহ অনিক জানান, তাদের বাবা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে গত ২৪ জুলাই দেশে ফেরার কথা ছিল। বাবাকে নিয়ে বাড়ি উমর ভাই বাড়িতে আসবে বলেছিলো। কিন্তু এরই মধ্যে গত ১৯ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে পুলিশে গুলিতে মৃত্যু হয়। ভাইয়ের বন্ধুদের মাধ্যমে আমরা মৃত্যুর খবর পাই। তখন লাশ আনতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায় আমাদের স্বজনরা। হাসপাতালে গিয়ে লাশ খুঁজতে চাইলে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি আমাদের, হাসপাতালের লোকজন জানায় থানা পুলিশের অনুমতি লাগবে। পরে শাহবাগ থানায় গেলে পুলিশ জানায়, ওমর ফারুক নামে কেউ ওখানে নেই। পরে সূত্রাপুর থানায় গেলে সেখানেও ওই নামে কারো লাশ নেই বলে জানিয়ে দেয় পুলিশ। পরবর্তিতে কোন সুরাহা না পেয়ে আমাদের স্থানীয় এমপি মোশতাক আহমেদ রুহী সাহেব এর সহায়তায় হাসপাতালে খোঁজার অনুমোতি পাই। ওখানে গিয়ে একটা সাধারণ ঘরে অর্ধশতের বেশি লাশের মধ্য থেকে ভাইকে খুঁজে পাই। পরে পোস্টমর্টেমসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে মৃত্যুর দুইদিন পর লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসে জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওমর ফারুকের বাবা আব্দুল খালেক বলেন, দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বোঝা, বাবার কাঁধে ছেলের লাশ। আমার ছেলে রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতো। এখন সে নিজেই দুনিয়াতে নাই। পরোপকারী ছেলেটার জীবন এভাবে নিভে যাবে বুঝিনি। আমার ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
উমর ফারুক কে স্মৃতিতে ধরে রাখতে তার অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়া সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘‘ব্লাড ডোনার সোসাইটি’র কার্যক্রম চালাতে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে সহপাঠী ও সংগঠনের সদস্যরা। ইতোমধ্যে নাম পরিবর্তন করে শহীদ উমর ফারুক ব্লাড ডোনার সোসাইটি নামকরণ করা হয়েছে। রক্তদান কর্মসূচীর মাধ্যমেই বেঁচে থাকবে, আমাদের সবার প্রিয় মেধাবী শিক্ষার্থী উমর ফারুক।
Leave a Reply