দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : ২৪ ঘন্টার ভিতরেও আমার স্বামীর খুনিরা ধরা পড়লো না, আমার স্বামী পুলিশ প্রশাসনের লোক হইয়াও যদি সঠিক বিচার না পায়, কি করবো আমার বলার কিছুই নাই! শনিবার (১১ জানুয়ারী) দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়া পুলিশ সদস্য শফিকুল ইসলামের স্ত্রী রাবিয়া খাতুন।
তিনি আরো বলেন, আমি ভাবছিলাম ২৪ ঘন্টার ভিতরে আমার স্বামীর খুনিদের পুলিশ ধরবো, কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা (পুলিশ) ওদের ধরতে পারছে না, অহন আইসা উল্টা জিগায় আমারে, আমি কাউরে সন্দেহ করি কিনা, সিসিটিভি ফুটেজে সরাসরি দেখা যাইতেছে লোকটা দৌড় মারছে, দৌড় মারা লোকটারে ধইরা জিজ্ঞেস করলেই তো মুল ঘটনা বাহির অইবো। তারা এটাও পারছে না।
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে বাড়িতে এসে দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন পুলিশের এসআই শফিকুল ইসলাম (৪৫)। পুলিশের ওই সদস্য জামালপুরে কর্মরত ছিলেন। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী এই নির্মম হত্যার বিচার চান। নিহত পুলিশ কর্মকর্তা দুর্গাপুর পৌর শহরের বাগিচাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের রফিকুল ইসলামের পুত্র।
জানা গেছে, শফিকুল ইসলাম জামালপুরে বেতারে এসআই পদে কর্মরত ছিলেন। গত ৮ জানুয়ারি ছুটিতে তিনি নিজ বাসায় এসেছিলেন। ঘটনার দিন গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারী) সন্ধ্যার দিকে বাগিচা পাড়ার নিজ বাসা থেকে বের হয়ে বাজারে গিয়েছিলেন তিনি। বাজার থেকে ফেরার পথে ৬টা ২০ মিনিটের দিকে পৌর শহরের উকিলপাড়া এলাকার পান মহল সংলগ্ন গলির সড়কে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শফিকুল ইসলামকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হাত, পা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গা জখম করে। দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শফিকুল ইসলামের ডান পায়ের গুড়ালীর অংশ প্রায় আলাদা হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছালে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয় জনকে আসামি করে দুর্গাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহতের বাবা রফিকুল ইসলাম।
এদিকে গতকাল শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল কালাম আযাদ ও জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান। পরে বিকেলে নিহত পুলিশ সদস্যের গ্রামের বাড়িতে জানাজায় অংশ নেন ও নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
পরবর্তিতে জানাজা শেষে ডিআইজি আবুল কালাম আযাদ সাংবাদিকদের বলেন, ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং যাথাযতভাবে তদন্ত করা হবে। আমার বিশ্বাস অতিদ্রুত এটার রহস্য উন্মোচন হবে।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো আসামীকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। অভিযান অব্যাহত রয়েছে, আশা করছি দ্রুত এ হত্যা কান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারবো।
Leave a Reply