নেত্রকোনা প্রতিনিধি : ‘‘উন্নত জীবন ও উন্নত ভবিষ্যতের জন্য খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করি’’ এই প্রতিপাদ্যে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র সহযোগিতায় ও নেত্রকোনা সদর উপজেলার উত্তর হাসামপুর গ্রামের মিলেমিশে কাজ করি নারী সংগঠন ও স্থানীয় গ্রামবাসী এবং কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের বনবেড়া গ্রামের বনলতা নারী সংগঠনের উদ্যোগে পালিত হয়েছে বিশ্ব খাদ্য দিবস। বুধবার (১৬ অক্টোবর) নানা আয়োজনে এ দিবস পালিত হয়।
বদলাচ্ছে জলবায়ু, বাড়ছে ঝুঁকি, কৃষকরাই সুরক্ষিত রাখবে দেশের কৃষি ও খাদ্যের ভবিষ্যত। দেশের এই মহান খাদ্যযোদ্ধাদের প্রতি বিশ্ব খাদ্য দিসবে জানাই শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। আমাদের জীবনকে উন্নত ও সুন্দর করতে হলে যেমন প্রয়োজন নিরাপদ খাদ্য তেমনি প্রয়োজন খাদ্যের অধিকার। বাংলাদেশের নারীরা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের কারিগর। জলবায়ু সমস্যা মোকাবেলা করে সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করে থাকেন।
এ উপলক্ষে অচাষকৃত খাদ্যমেলা, হাজল কর্মশালা, বীজ বিতরণ সহ এক আলোচনা সভার আয়েঅজন করা হয়। নেত্রকোনার হাসামপুর গ্রামে এ মেলা উদ্বোধন করেন গ্রামের প্রবীণ নারী (৭৫) খালেদা আকতার। এ সময় ডা. মানিক চন্দ্র সরকার, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাসলিমা সুলতানা সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। মেলায় মোট ১২টি স্টলে বৈচিত্র্যময় ৫০ ধরনের অচাষকৃত খাদ্য প্রদর্শীত করা হয়।
অপরদিকে কলমাকান্দার বনবেড়া গ্রামের নারী সংগঠনের উদ্যোগে প্রদর্শীত হয় অচাষকৃত খাদ্যমেলা। এতে ‘‘গারো-হাজং আদিবাসীদের ভাষায় নামকরণকৃত’’ সব্জি কাক্কুচী, রিফুজি পাতা, কানথাপ, খিরিং, বাসক, মিগং, মিবিচ্রী, গানজেদ, স্থেং, কারিক্ষা, বিকি তিত্তা, চুনচুনি পাতা, টকলে পাতা, পাহাড়ি আলু, মিক্রাম, তেলাকুচি, দুধকচু, বেতপাতা, খাসিয়া মেন্ডা, দংকেলে, সেরেংকি, খেতাবরি প্রদর্শন করা হয়।
আলোচনা সভায় অচাষকৃত নিরাপদ বিষমুক্ত এসব পছন্দের খাবার নিয়ে প্রত্যেক নারী পুরুষ শিশু তার মতামত তুলে ধরে কিশোর ইলমা বলেন, আমরা নতুন প্রজন্মের অনেকেই অচাষকৃত সব্জি গুলোর নাম জানি না। আমি শালুক পছন্দ করি। আমরা সকল ধরনের সব্জির সাথে পরিচিত হতে চাই। সেইসাথে হাজল পদ্ধতি সম্পর্কে গ্রামের কিশোর-কিশোরীদের ধারনা দেয়ার আহবান জানাই।
কৃষক মুর্তুজ আলী বলেন, “আমার পছন্দের খাবার হলো বিরই ধানের চালের ভাত, শিং ও কৈ মাছ। আমি আমার পছন্দের খাবার খেতে চাই।” আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ খাদ্য রেখে যেতে চাই।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাসলিমা সুলতানা বলেন, আমাদের পছন্দের খাবার দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছেসকল প্রাণের খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত হোক, তবে সেই খাদ্য যেন হয় নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত। আমাদের নিরাপদ খাদ্যের জন্য কাজ করতে হবে। প্রাকৃতিক যেসব খাবার আছে সেগুলোর উৎস আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। অচাষকৃত খাদ্য সংগ্রহ ও রক্ষনাবেক্ষনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়।
এসময়, বারসিক প্রতিনিধি ভিক্টর ডিব্রা, আলপনা নাফাক, গুঞ্জন রেমা, খাদিজা আকতার, বারসিকের সহযোগী আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শংকর ম্রং সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply