দুর্গাপুর(নেত্রকোনা)প্রতিনিধি : নজরকাড়া ডিজাইন আর মন মাতানো রঙ্গে তাঁতে কাপড় বুনে চলছে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি এলাকার আদিবাসী মহিলারা। তৈরীকৃত আদিবাসী পোষাক স্থানীয় চাহিদার পাশাপাশি পর্যটকরাও কিনে নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এখানকার আদিবাসী মহিলারা অন্যান্য পেশার পাশাপাশি তাঁত শিল্পের কাজে সাচ্ছন্নবোধ করেন বেশী। একসময় এ শিল্প ছেড়ে তারা চাষাবাদ সহ নানা কাজে জড়িয়ে পড়লেও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই তাঁত শিল্প। অত্র এলাকার আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের কথা ভেবে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ২০১৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে সামান্য সহযোগিতা পেয়ে পুনরায় শুরু হয়েছিলো তাঁত শিল্পের কাজ। কিন্ত বর্তমানে আর্থিক সমস্যা ও নানা জটিলতায় হারিয়ে যেতে বসেছে এতিহ্যবাহী এই তাঁত শিল্প।
এ বিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, তাঁতের ঠকঠক শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিরিশিরি এলাকার একমাত্র তাঁত ঘরটি। আদিবাসী মহিলা সদস্যগন তাঁদের ঐতিহ্যগত পোষাক ‘‘দকমান্দা, ওড়না ও গামছা তৈরিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এখানে কমবেশি সবাই তাঁতের সঙ্গে পরিচিত। তাঁতকে পুরোপুরি শিল্পে রূপান্তর করতে সকলেই একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন। আধুনিক তাঁত মেশিন না থাকায় এখনও পুরাতন (পা-চালিথ) মেশিনে কাপড় বোনার ফলে এ থেকে সঠিক সময়ে কাপড় সরবরাহ, যেনো এক বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ নিয়ে আদিবাসী শ্রমিক শেফা ¤্রং বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার চেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের আর্থিক সহায়তায় আমাদের হারিয়ে যাওয়া শিল্প পুনরায় ফিরে পেয়েছি। সরকারের সহায়তা পেলে, আমরা এ শিল্পকে অনেক দূর নিতে যেতে পারবো। নতুন মেশিন না থাকায় কাপড় তৈরীতে বেশি খরচ পড়ায় বাইরে বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হয়। আমাদের এ শিল্পকে রক্ষার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিনা সুদে ঋণ প্রদান করলে, আমাদের পোষাক দেশের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাহিরেও সরবরাহ করতে পারবো।
বিরিশিরি বহুমুখী মহিলা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদিকা অমিতা সাংমা বলেন, এক সময় আদিবাসী মহিলারা এই তাঁত শিল্প থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছিলো। কন্তি ধীরে ধীরে এ শিল্পটি আধুনিকতা এবং অর্থের অভাবের কারনে যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখনো এ শিল্পটিকে বৃহৎ শিল্পে পরিনত করা যাবে। এ শিল্পকে ঘিরে এখনো স্বপ্ন দেখেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মহিলারা। এখানে প্রায় ২২টি মেশিন রয়েছে, সুতা কাটার মেশিন সহ অন্যান্য আধুনিক যন্ত্র ক্রয় করতে পারলে, কম খরচেই তৈরী করা যেতো আদিবাসী পোষাক সহ অন্যান্য পোষক। এতে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাজিরেও রপ্তানী করা যেতো।
তাঁত শিল্প নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম রকিবুল হাসান এ প্রতিনিধিকে বলেন, এ শিল্প রক্ষায় আমাদের সহায়তা অব্যহত থাকবে। স্থানীয় আদিবাসী নারীরা গৃহের কাজ সেরে তাঁত দিয়ে কাপড় তৈরি করেন। তাঁতের তৈরি কাপড়কে আকর্ষণীয় করতে উন্নত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিনা সুদে সরকারী ঋণ দেয়া হলে, এ শিল্প নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হতো। এ অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন সহ তাঁত শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের সহায়তা কামনা করছি।
Leave a Reply