কলমাকান্দা (নেত্রকোন)প্রতিনিধি : নেত্রকোনার কলমাকান্দায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে । শুক্রবার দুপুর দুইটা থেকে চারটা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে এ সংঘর্ষে চলে। রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। দল দুটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয় এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আহতরা ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও উত্তেজনা থাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, শুক্রবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে মিছিল বের করে নেতাকর্মীরা কলমাকান্দা সদরের বিএনপি কার্যালয়ে আসতে শুরু করে। এতে বাধা দেয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সংষর্ষে আহত হয় ইউপি সদস্য ও কলমাকান্দা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক, যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, মাসুম মিয়া, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক অমিত সরকার, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা বাবুল মিয়া, দেলোয়ার হোসেন, যুবশ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক মিয়া, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক গোলাম রসুল, সদস্য সচিব শেখ রবিন, সদস্য মাজহারুল ইসলাম হৃদয়, সোহানুর রহমান সোহান , শ্রমিকদল নেতা রুবেল মিয়া, যুবদল নেতা ভুট্টু মিয়া, স্বপন মিয়া, তাইমুল হক, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা খোকন মিয়াসহ অর্ধশত নেতাকর্মী। এসময় পুলিশের এএসআই মামুন ইবনে হেলাল, এএসআই শরিফ উদ্দিন, এএসআই আসাদুজ্জামান, পুলিশ সদস্য সাজাদ হোসেন আহত হন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসলাম উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ধারালো অস্ত্রসহ লাঠিশোটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা করেন। এ সময় তারা দোকানপাট ভাঙচুর করছে ও বোমা ফুটাইছে। এ হামলায় কলমাকান্দা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হকসহ তাদের ত্রিশ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। গুরুতর আহত এমদাদুল হককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি ।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ খায়ের বলেন, আমরা বিএনপি’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন উপলক্ষে থানায় অনুমতির জন্য আবেদন করি। কিন্তু থানা থেকে অনুমতি দেয়নি। তাদের বাঁধার মুখে উপজেলা দলীয় কার্যালয়ে আমরা দলীয় পতাকাও উত্তোলন করতে পারিনি। বাজারের পশ্চিমে মারকাছ মসজিদ এলাকায় আমাদের বেশিরভাগ লোক অবস্থান করছিল। পরে দুপুরে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মীরা অফিসের দিকে শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে আসতে থাকলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত লগি বৈঠা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এসময় পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীর ওপর ফাঁকা গুলি চালায়। এতে করে তাদের অন্তত বিশ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আজ (শুক্রবার) সকাল পর্যন্ত আমাদের তিনজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ জানান তিনি ।
কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র ও লাটিশোটা নিয়ে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে জন দুর্ভোগ সৃষ্টি করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এসময় নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। এ হামলায় পুলিশের চার জন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
Leave a Reply