বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ অপরাহ্ন

এই মাত্র পাওয়া

ব্যাংক ঋণে জামানতের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম আসছে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট : শনিবার, ২০ মে, ২০২৩
  • ৯২ পঠিত

দিগন্ত ডেক্স : কেবল স্থাবর সম্পত্তিই নয়, স্থায়ী আমানত কিংবা স্বর্ণ-রৌপ্য ও মেধাস্বত্বের মতো অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতেও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া যাবে। গত বৃহস্পতিবার ‘সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর আইন) ২০২৩’-এর চূড়ান্ত খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

তবে বন্ধক রাখার জন্য অস্থাবর সম্পত্তির নিবন্ধন থাকতে হবে। এ লক্ষ্যে মূল্য নির্ধারন সম্ভব এমন অস্থায়ী সম্পদ নিবন্ধনের জন্য আলাদা একটি কর্তৃপক্ষ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন এই আইনের ফলে ব্যাংক এবং ঋণগ্রহীতা উভয় পক্ষই লাভবান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অস্থাবর সম্পত্তি কী? : ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ঋণ নিতে হলে তার বিপরীতে জমি বা দালানের মতো সমমূল্যের দৃশ্যমান কোন সম্পদ ব্যাংকে জমা বা বন্ধক রাখতে হয়।

অনুমোদিত নতুন ‘সুরক্ষিত লেনদেন’ আইনের ফলে ব্যাংকের থেকে ঋণ নিতে দৃশ্যমান সম্পত্তির বদলে অন্যান্য যেসব ভাসমান সম্পত্তির বাজারমূল্য আছে সেগুলোও ব্যাংক বন্ধক হিসেবে রাখতে পারবে।

নতুন আইনের ফলে এখন থেকে কারো প্রয়োজন হলে ব্যাংকে রাখা ফিক্সড ডিপোজিট, সোনা-রূপা বা দেশের বাইরে রপ্তানির উদ্দেশ্যে রাখা কাঁচামালের বিপরীতে ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। কপিরাইট আছে এমন কিছুও চাইলে ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা যেতে পারে।

এ ছাড়া দাম নির্ধারণ সাপেক্ষে আসবাবপত্র, ইলেকট্রিকপণ্য, সফটওয়্যার, অ্যাপসের মতো পণ্যও ঋণ নেয়ার সময় ব্যাংকের কাছে রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া পুকুরের মাছ, বাগানের গাছ, গবাদি পশুর বিপরীতেও ব্যাংক ঋণ দেবে।

সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আমিনের মতে, এই আইনের ফলে লোনের পরিধি বাড়বে, বেশি মানুষ ঋণের আওতায় আসবে, যাদের ব্যবসা ভালো কিন্তু দৃশ্যমান সম্পদ নেই তারাও এতে অন্তর্ভূক্ত হয়ে উপকৃত হবেন।

নতুন আইনে নতুন সুযোগ : গত বছর এপ্রিলে অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতে ব্যাংক ঋণ নেয়ার সুযোগ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৈরি করা খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের কথা চিন্তা করে নতুন আইন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তৎকালীন মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

আসন্ন নতুন আইনটিকে সময়োপযোগী বলে মনে করছেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর।

‘ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে ভূমি, বাড়ি এ ধরনের স্থাবর সম্পত্তি কেন্দ্রিক বন্ধকের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এর বাইরে ব্যাংক যেতে চাইতো না, আর আইনত পারতও না’, বলেন তিনি।

কিন্তু আধুনিক অর্থনীতিতে মেধাস্বত্ব, ব্র্যান্ড ইত্যাদির মতো আরও অনেক কিছু যুক্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে সম্পত্তির সংকীর্ণ সংজ্ঞা থাকাও উচিৎ না বলে মনে করেন তিনি।

ঝুঁকি নিয়েও আছে সংশয় : বিদেশে অনেক আগে থেকেই এই আইন চালু থাকলেও বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এধরনের আইন চালু হতে যাচ্ছে।

যেকোনো ব্যাংক, বিমা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা, গৃহ নির্মাণ ঋণদাতা কর্পোরেশন, কৃষি ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান, সমবায় সমিতি এবং ঋণদানকারী আন্তর্জাতিক বা উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্যই ‘সুরক্ষিত আইন’ প্রযোজ্য হবে।

ফলে ভালো ব্যবসায়ী কিন্তু যথাযথ সম্পত্তির অভাবে যারা ঋণ করতে পারছিলেন না তারাই এই আইনে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বলে মনে করেন নুরুল আমিন।

আইন করাতে অনেকের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।

তিনি বলেন, এটি নতুন সুযোগ। অনেকে আছে যারা ঋণ নেওয়ার জন্য স্থাবর সম্পত্তি দিতে পারে না, তাদের জন্য এটি সেই সুযোগ করে দেবে।’ তবে স্থাবর সম্পত্তির চেয়ে অস্থাবর সম্পত্তির বিনিময়ে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিও কিছুটা বাড়বে বলে মনে করেন এই ব্যাংক কর্মকর্তা। বাংলাদশের ক্ষেত্রে স্ক্যামের মাধ্যমে লেনদেনের কারণেই ব্যাংকের সমস্যাগুলো হয় বলে মত মনসুরের। ‘আমাদের দেশে ব্যাংকিং খাতে যে দুর্নীতি তা সুশাসনের অভাবে হয়’, বলেন তিনি।

ঋণখেলাপির সংস্কৃতি থাকলেও এই দেশে ভালো ঋণ আছে উল্লেখ করে মিস্টার আমিন বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণের অর্থ ফেরত না দেয়া একটা প্র্যাকটিস। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করতে চাইলে তা কোনদিন বন্ধ হবে না। তবে এই ঝুঁকি মোকাবেলায় স্বচ্ছতার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

যাকে ঋণ দেয়া হচ্ছে তার ব্যবসা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা এবং সার্বিক দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে ঝুঁকি কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।

আইনে উল্লিখিত অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা
>> প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দ্বারা সমর্থিত ও সুরক্ষিত রপ্তানির উদ্দেশ্যে অর্থ বা রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী পণ্য প্রস্তুতের কাঁচামাল
>> ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত আমানতের সনদ
>> স্বর্ণ, রৌপ্য এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতু, যেটির ওজন ও বিশুদ্ধতার মানস্বীকৃত কর্তৃপক্ষ দিয়ে সার্টিফাইড
>> নিবন্ধিত কোম্পানির শেয়ার সার্টিফিকেট
>> মেধাস্বত্ব অধিকার দ্বারা স্বীকৃত মেধাস্বত্ব পণ্য (পেটেন্ট কপিরাইট)
>> কোন সেবার প্রতিশ্রুতি যেটির বিপরীতে সেবার গ্রহীতার মূল্য পরিশোধের স্বীকৃত প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে (কার্যাদেশ)
>> মৎস্য, গবাদি পশু, দণ্ডায়মান বৃক্ষ ও শস্যাদি, ফলজউদ্ভিদ ও ঔষধিউদ্ভিদ
>> আসবাবপত্র, ইলেকট্রিকপণ্য, সফটওয়্যার, অ্যাপস- যেগুলোর মূল্য প্রাক্কলন করা সম্ভব
>> যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন
>> খনিজ সম্পদ
>> যথাযথভাবে সংরক্ষিত কৃষিজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত মৎস্য বা জলজ প্রাণী, আয়বর্ধক জীবজন্তু (অজাত শাবকসহ)। সূত্র : বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
© All rights reserved © 2023 digantabangla24.com