কলমাকান্দা(নেত্রকোনা)প্রতিনিধি : নেত্রকানার কলমাকান্দায় উপজেলায় সাবেক সোনালী ব্যাংক ভবনের সামনে অজ্ঞাত (৫০) এক অসুস্থ্য ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে পথচারীরা চাঁদা তুলে হাসপাতালে ভর্তি করেন। অজ্ঞাত এ রোগীকে নিয়ে বিপাকে রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্স, চিকিৎসক সহ কর্তৃপক্ষ ! আজ বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) দেখতে যাবার কথা রয়েছে বলে জানান সমাজ সেবা কর্মকর্তা।
এ অজ্ঞাত রোগীকে স্যালাইন পুশ করার কিছুক্ষন পরে তা ছিড়ে বিছানা থেকে নেমে মেঝেতে শুয়ে পড়ে। প্রস্রাব ও মল ত্যাগ করছে বিছানায়। কথা বলতে না পারায় পরিচয়ের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে অজ্ঞাত রোগীকে দেখলে মনে করিয়ে দেয় দুর্ভিক্ষে ছবির কথা। পাঁজরের হাঁড় গুলো চামড়ার সাথে মিশে গেছে। হাঁড় গুলোর অস্থিস্ত দেখা মেলে। কিন্তু শরীরে মাংসে অস্থিত্ব বিলীন হয়ে গেছে পুষ্টিহীনতার অভাবে।
এদৃশ্য দেখে ওয়ার্ডের অন্যান্য রোগীদের মাঝে দেখা দিয়েছে ভীতি। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রয়েছে বিপাকে। বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের বারান্দায় স্থানান্তর করে চিকিৎসা দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসক বলছেন রোগীকে নিয়ে বিপাকে তারা। অভিভাবক না থাকায় উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বুধবার রাতে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে ফোন দিলে তিনি এখনও স্ব-শরীরের ভিজিট করা হয়নি বলে জানান।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স সুজিতা ঘাগড়া স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৯ তারিখে রাতে অজ্ঞাত রোগীকে ভর্তির পর চিকিৎসা সহ সেবা দেয়া শুরু করি। ডাক্তারের নির্দেশনা অনুসারে তার চিকিৎসার জন্য যে ধরনে প্রেসক্রাইব করা আছে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা যখন ক্যানোলা দিয়ে স্যালাইন পুশ করি। কিছুক্ষণ পরে এ রোগী ছিড়ে ফেলে দেয়। যতক্ষণ স্যালাইন চলতে থাকে ততক্ষণ আমাদের তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। মল-মূত্র বিছানায় ত্যাগ করে। এতে রোগীর নিজের সমস্যা হয় সাথে অন্যান্য রোগীদেরও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তারপরেও আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি এ অজ্ঞাত রোগীকে।
উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হাসিবুর রহমান স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, চিকিৎসা চলা অবস্থায় অজ্ঞাত রোগীটির অবস্থা উন্নতি হচ্ছে না। এ অবস্থায় তার পরিচয় ও অভিভাবকের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ অথবা নেত্রকোনা পাঠানো দরকার। তাঁকে নিয়ে আমরা খুবই চিন্তায় আছি।
এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আমজাদ হোসেন স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, গত ১৯ আগস্ট রাত প্রায় ১০টার দিকে দুইজন পথচারী এ অজ্ঞাত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আসার সময় রোগীর প্রচন্ড জ্বর, শরীরের অবস্থা খুবই দুর্বল এবং ক্রিটিক্যাল পজিশন ছিল। আমরা ভর্তি নেই ও সাধ্যমত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করি। শুরুর দিকে থেকে রোগীর অবস্থার উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য নেত্রকোনা পাঠাতে অভিভাবক দরকার তা আমরা পাচ্ছি না। রোগীর উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষা সহ আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। যেটা আমরা এখানে দিতে পারছি না। বিপাকের বিষয়ে বলেন, বিপাকে তো রয়েছি, উন্নত চিকিৎসা দিতেও পারছি না আবার রোগীকে ছাড়তেও পারছি না অভিভাবকের অভাবে। প্রস্রাব ও পায়খানা করে দেয় যা অন্যান্য রোগীদেরও বিরাট সমস্যা হচ্ছে। পরিবারের লোকজন থাকলে ভাল সেবা পেতে পারত বলে তিনি জানান।
কলমাকান্দা উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মুঠোফোনে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, ডাক্তার আমাকে জানিয়েছে। গত দুদিন আগে নেত্রকোনায় মিটিংয়ে আসায় ওখানে এক ফার্মেসীকে প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহের নির্দেশনা দেয়া আছে। স্ব-শরীরের দেখেছেন এ বিষয়ে তিনি বলেন, এখনও দেখা হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার দেখতে যাবার কথা স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান ওই কর্মকর্তা।