হাবিব সারোয়ার আজাদ, সিলেট ব্যুরো ইনচার্জ : ৪৯তম বিজয়ের মাসেই একাওরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রশান্ত সরকার (বিএ) চলে গেলেন না ফেরার দেশে! মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো (৭৬)।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের জয়রামকুড়া খ্রীষ্টান মিশনারীজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ৫নং সেক্টরের সুনামগঞ্জ মহকুমার তাহিরপুর থানার টেকেরঘাট সাব সেক্টর’র তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৪৩ সালের ২০ আগষ্ট দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলি গ্রামের প্রয়াত প্রমোদ সরকার-লতিকা সরকার দম্পতির কোলজুরে বাঙালী খ্রীষ্ট্রান বনেদী পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন প্রশান্ত সরকার। অবিবাহিত অবস্থায় শিক্ষা জীবনে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ২৭ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি।
দেশ স্বাধীনের পর এ বীরযোদ্ধা ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার ধাইরপাড়ার প্রসান্ন কুমার রেমা-অরুণাবালা রেমার জেষ্ট মেয়ে শীলাবতী রেমার সাথে বৈবাহিকজীবন শুরু করে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রশান্ত সরকার প্রথমে শিক্ষকতা পরবর্তীতে ওয়ার্ল্ড ভিশন অর্গানাইজেশনে কর্মরত থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ, গারো ব্যাপ্টিষ্ট কনভেনশন সেন্ট্রাল বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ও জিবিসির জেনারেল সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্ট থেকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে প্রদত্ত ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রামাণ্য তালিকার এ বীরযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা হতে রাষ্ট্রীয় ভাতাদি সহ অন্যান্য সুবিধা গ্রহন করলেও দূরারোগ্য মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার টানা দু’বছর চিকিৎসারপর শারীরিকভাবে ক্রমশ দূর্বল হয়ে পড়ায় গত ১২ ডিসেম্বর বুধবার ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের জয়রামকুড়া খ্রীষ্টান মিশনারীজ হাসপাতালে প্রশান্ত সরকারকে ভর্তি করা হয়।
টানা ৯দিন হাসপাতাল বেডে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকার পর শুক্রবার এ বীরযোদ্ধা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
মৃত্যুকালে স্ত্রী, তিন মেয়েসহ অসংখ্য আত্বীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি। তার স্ত্রী শীলাবতী রেমার (অব.স:প্রাবি শিক্ষক), জেষ্ট মেয়ে ডা.খ্রীষ্টিনা মৌরী সরকার চিকিৎসা পেশায়, মেঝো মেয়ে জেনিথ মৌসুমী সরকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট কন্্সালটেন্ট, কনিষ্ঠ মেয়ে জর্জিনা মৌটুসী সরকার গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় মাষ্টার্স সম্পন্ন করে পরবর্তীতে অষ্ট্রেলিয়া হতে উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করে বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত আছেন।
শুক্রবার মুক্তিযোদ্ধা প্রশান্ত সরকারের মৃত্যুও খবর ছড়িয়ে পড়লে পৃথক পৃথক বিবৃতিতে তার আত্বার শান্তি ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, টেকেরঘাট সাব সেক্টর কোম্পানী কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাহিদ উদ্দিন আহমদ, তাহিরপুর থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাবেক কমান্ডার ও শহীদ সিরাজ স্মৃতি সংসদ সভাপতি হাজি রৌজ আলী, শহীদ সিরাজ স্মৃতি সংসদ এর সদস্য ও দৈনিক যুগান্তরের ষ্টাফ রিপোর্টার হাবিব সরোয়ার আজাদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারন সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, অর্থ সম্পাদক এড্রো সলোমার, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাবেক কমান্ডার মোজাম্মেল হোসাইন, ডেপুটি কমান্ডার মীর ইব্রাহীম।
জীবদ্দশায় পূরণ হলনা সেই আকাঙ্খা: পুরোপুরী শয্যাশায়ী হবার বছর খানেক পুর্বে প্রশান্ত সরকার স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনকে জানিয়েছিলেন, ৪৯তম বিজয় দিবসের দিনে সাব সেক্টরের স্মৃতি বিজরিত মুক্তিযোদ্ধাদের তীর্থভূমি ট্যাকেরঘাটে অনন্ত আরও একবার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্খার কথা।