নেত্রকেনা প্রতিনিধি : বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও তুষাই পাড়ের কৃষক সংগঠনের আয়োজনে “স্থানীয় ধানজাত গবেষকদের এক মতবিনিময় সভা” অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দিনব্যাপি বারসিক নেত্রকোনা সেন্টারের রামেশ্বরপুর কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায়, নেত্রকোনা জেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির সভাপতি কৃষক গবেষক সায়েদ আহমেদ খান বাচ্চুর সভাপতিত্বে ময়মনসিংহের তারাকান্দার সাধুপাড়া, নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া, আটপাড়া উপজেলার দূর্গাশ্রম, রামেশ্বরপুর, নেত্রকেনা সদর উপজেলার বিশ্বনাথপুর, কাইলাটি, মৌজেবালি, বামনমুহা ও কলমাকান্দা উপজেলার চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের ১২ জন কৃষক গবেষক অংশগ্রহন করেন। এতে নেত্রকোনা অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় জাতের ধান নিয়ে গবেষণা, চাষ, সংগ্রহ ও সংরক্ষণে ওই এলাকার কৃষকদের ভুমিকা নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়েছে।
অংশগ্রহনকারী কৃষকগণ বলেন, ২০০৫ সাল থেকে নেত্রকোনা অঞ্চলে কৃষকের নেতৃত্বে স্থানীয় ধানজাত গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। গবেষণা কার্যক্রম থেকে বাছাই করা ধান সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে বর্তমানে ৪৯ টি গ্রামে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কৃষকেরা পছন্দের ধান বাছাই করে চাষ ও সংরক্ষণ করছেন তারা। এ পর্যন্ত ৬৩টি ধানজাত পছন্দ করে এককভাবে চাষ করছেন স্থানীয় কৃষকগণ। জাতগুলো হলো : মালশিরা, হেকিম ধান, খেকশিয়াল, কাবুনডুলান, রতিশাইল, বিশালী বিন্নি, সুবাশ, আগাম শাইল, তুলসিমালা, গারোবিন্নি, ইয়র চাল, লক্ষ্মীবিলাস, সোহাগ, চিনিশাইল, আইজং, বিরই, রহমাত, বাঁশফুল, সোনালী পাইজাম, ভোলানাথ,ভারত, চিনিগুড়া, সতীন, ঋতুপাইজাম, খাইনল, খামা, গচি, লাফা, বাদশাভোগ, কুমড়ি, সাদাকুমড়ি, কাটারিভোগ, ফুলবাইন, কাডিডিট, সিলেট বালাম, খাইসাবিন্নি, বদ্দিরাজ, জেসমিন, পুইট্টা আইজং, অগনঢেপি জাতগুলো বাছাই করে এলাকার কৃষকেরা চাষ করছে।
তারাকান্দার কৃষক আব্দুল হেকিম বলেন, “আমার আবিস্কার করা হেকিম ধান বর্তমানে প্রায় ৯০০ জন কৃষক চাষ করছে। এতে অন্য ধানের চেয়ে এ ধান চাষ করার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কেন্দুয়ার কৃষক আবুল কালাম বলেন, ‘আমার বাছাই করা মালশিরা ধান, দুই জেলার ৭ উপজেলার ১৩ টি গ্রামের মানুষ এখন চাষ করছে”। দিন দিন এর চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কৃষক সায়েদ আহমেদ খান বাচ্চু বলেন, “আমাদের বীজসম্পদ আজ কোম্পানির প্যাকেটে বন্দি। আমাদের বীজ সম্পদ আমরা কোম্পানির হাতে তুলে দিতে পারিনা। আমাদের এই জাতগুলো সকল জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। বীজের অধিকার আমাদের হাতে নিয়ে আসতে হবে”। তবেই আমাদের এই শ্রম শক্তিতে রুপান্তরিত হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই গবেষনার কাজ কে এগিয়ে নিয়ে সকলকে আহবান জানান।
কৃষক গবেষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আবুল কালাম, আব্দুল হেকিম, আব্দুল কাদির, আব্দুল বারি, সামছুজ্জামান, আব্দুল ওয়াদুদ খান, নুরুল ইসলাম, যুব কৃষক এনামুল খান, আদিবাসি কৃষক তাপস হাজং, উজ্জল হাজং।
Leave a Reply