দিগন্ত ডেক্স : সাধারণত বুকের বাঁ দিকে হার্ট থাকে। স্ক্যান, ইসিজি সব কিছুতেই তেমনটাই ধরা পড়েছে। কিন্তু এমন মানুষও এই পৃথিবীতে আছেন, যাদের হৃদ্যন্ত্র রয়েছে দেহের ডানপাশে। পৃথিবীতে যত ধরনের বিরলতম রোগ আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো এটি।
সম্প্রতি কলকাতার দুটি হাসপাতালে এমন দুটি হার্ট বা হৃদপিণ্ডের অপারেশন হয়েছে, যা ‘অতি বিরল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন চিকিৎসকরা। এই দুই রোগীর মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন ভারতীয়।বাংলাদেশি নারীর শুধু হার্ট নয়, শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ – যকৃৎ, ফুসফুস, প্লীহা, পাকস্থলী- সবই উল্টোদিকে অবস্থান করছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এ রকম রোগী ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে একজন পাওয়া যায়।
psd=W251bGwsbnVsbCxudWxsLDFd&nt=1&ifi=1&uci=a!1&btvi=1&fsb=1&dtd=1416বাংলাদেশি ওই নারীর প্রত্যঙ্গগুলো যে উল্টোদিকে অবস্থান করছে, সেটা তার জন্মদাত্রীর গর্ভধারণের সময়কার একটি অবস্থা, কোনও রোগ নয় এটি। আবার যে ভারতীয় রোগীর হার্ট অপারেশন করে পেসমেকার বসানো হয়েছে, তার হৃৎপিণ্ড জন্মের সময়ে নয়, কিছুটা বড় হওয়ার পরে যক্ষ্মা রোগের কারণে স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে গিয়ে বুকের ডানদিকে চলে গেছে। এরকম কোনও ব্যক্তির বিশেষ এক পদ্ধতিতে কাজ করবে, এরকম পেসমেকার বসানোর অপারেশন বিশ্বে আগে হয়নি বলেই দাবি করা হচ্ছে।দুই রোগী কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জানতেন না যে তাদের দেহে হার্ট বা অন্য প্রত্যঙ্গগুলি স্বাভাবিক অবস্থানের উল্টোদিকে রয়েছে। তাদের দুজনেরই চিকিৎসা চলছিল অনুমান নির্ভর এবং অন্তত একজনের ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসাও হয়েছিল।বাংলাদেশের সাতক্ষীরার বাসিন্দা মোনারাণী দাসের বছর দুয়েক আগে থেকে বুকের ডান দিকে ব্যথা শুরু হয়। পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন ডানদিকে যেহেতু ব্যথা, তাই অ্যাসিডিটি বা অম্বলের সমস্যা হচ্ছে।অপারেশনের পরে এখন মিসেস দাস রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় তার মেয়ের কাছে। সেখান থেকেই মোনারাণী দাস বলেন, ‘বুকের ডান দিকে ব্যথা শুরু হওয়ার কিছুদিন পরে শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। এর মধ্যেই হার্ট অ্যাটাক হয়। সেই চিকিৎসার জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়েই বাংলাদেশের ডাক্তারেরা বলেন যে আমার হার্ট বুকের ডান দিকে।’
তার মেয়ে বিষ্ণুপ্রিয়া দাস বলেন, তখনও তারা জানতেন না যে শুধু হার্ট নয়, শরীরের অন্যান্য প্রত্যঙ্গও উল্টোদিকে।মাকে কল্যানীর এক স্থানীয় ডাক্তারকে দেখিয়েছিলাম। তিনি কলকাতার মনিপাল হসপিটাল ব্রডওয়েতে ডা. সিদ্ধার্থ মুখার্জীর কাছে রেফার করে দেন বাইপাস অপারেশন করানোর জন্য। এই হাসপাতালটির নাম সদ্য পরিবর্তন হয়েছে, এর আগে এটি আমরি হাসপাতাল -সল্টলেক বলেই মানুষের কাছে পরিচিত ছিল।‘
মনিপাল হসপিটাল ব্রডওয়ে’ বলছে ‘গত মাসের ২৪ তারিখ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায় যে শুধু হৃৎপিণ্ড নয়, তার অন্যান্য প্রত্যঙ্গগুলিও উল্টোদিকে অবস্থান করছে।চিকিৎসকরা বলছেন যে, শুধু হৃদযন্ত্র বা হার্ট বাঁদিকের বদলে ডান দিকে থাকলে তাকে বলা হয় ডেক্সট্রোকার্ডিয়া আর এই বাংলাদেশি নারীর ক্ষেত্রে সব প্রত্যঙ্গগুলি উল্টোদিকে থাকার অবস্থাটিকে বলা হয় ‘ডেক্সট্রোকার্ডিয়া উইথ সাইটাস ইনভার্সিস’।
বিষ্ণুপ্রিয়া দাস আরও বলেন, অন্যান্য প্রত্যঙ্গ ডানদিকে না বাঁ দিকে, সেটা নিয়ে আমাদের কোনও মাথা ব্যথা ছিল না। হার্ট ডানদিকে শুনে কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। তবে ডাক্তাররা বলেছিলেন যে চিন্তার কিছু নেই, বাইপাস অপারেশন করলে মা আবার সুস্থ হয়ে যাবেন।অন্য যে রোগীর সম্প্রতি বিরল হার্ট অপারেশন হয়েছে তিনি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বাসিন্দা রেজাউল করিম।
তার বুকের ডানদিকে থাকা হার্টে পেসমেকার বসানো হয়। সেই পেসমেকার কাজও করবে সাধারণ পদ্ধতির থেকে অনেকটা ভিন্ন পদ্ধতিতে।রেজাউল করিমের অস্ত্রোপচার হয় মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। বাংলাদেশি রোগীর ক্ষেত্রে তার প্রত্যঙ্গগুলি যেমন তার জন্মদাত্রীর গর্ভধারণের সময়কার একটি বিরল অবস্থা, রেজাউল করিমের ক্ষেত্রে অবস্থা ভিন্ন।
চিকিৎসকরা বলছেন, তিনি কিছুটা বড় হওয়ার পরে যক্ষ্মা রোগের কারণে হার্ট বাঁ দিক থেকে জায়গা বদল করে বুকের ডানদিকে চলে আসে। রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি ছোট থেকেই খেলাধুলো করতাম। মাঝে মাঝেই দমের কষ্ট হত, কাশি হত। এরপরে প্রায় ২৫ বছর রাজনীতি করেছি, দৌড়োদৌড়ি লেগেই থাকত। স্থানীয় ডাক্তার দেখাতাম, তারা যেমন ওষুধ দিত, সেটাই নিয়মিত খেতাম। কিন্তু কয়েক বছর আগে থেকে খুবই দুর্বল লাগতে শুরু করে। এক পা চললেই যেন আর হাঁটার ক্ষমতা থাকত না। এই অবস্থা দেখে আমার মেয়ে প্লেনে করে ভেলোরে নিয়ে যায়। সেখানে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তারা আমাকে জানতে চেয়েছিল যে ওই যে ওষুধ খাচ্ছি, সেটা তো যক্ষ্মার ওষুধ, আমাকে কেন খেতে দিয়েছে স্থানীয় ডাক্তার।’
Leave a Reply