মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৮ অপরাহ্ন

এই মাত্র পাওয়া

যে কারণে বায়ু দূষণে শীর্ষেই থাকছে ঢাকা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট : শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ১৫৪ পঠিত

দিগন্ত ডেক্স : ভৌগোলিক কারণে প্রতিবছর শীতের সময় ঢাকার বায়ুদূষণ বাড়লেও এবার শীত শুরুর বেশ আগে থেকেই রাজধানীর বাতাসে দূষণের পরিমাণ বেড়ে গেছে এবং দূষণের দিক থেকে প্রায়ই প্রথম হচ্ছে।

বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের সূচকে গত দুই মাসে ঢাকা একাধিকবার ৩০০-এর বেশি একিউআই স্কোর নিয়ে সর্বোচ্চ দূষিতের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।

অথচ কোনো স্থানের একিউআই স্কোর যদি ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হওয়ার কথা। এমনকি, এই একিউআই স্কোর যদি পর পর তিন ঘণ্টা ৩০০-এর বেশি থাকে, তবে সেখান স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করা যেতে পারে।

‘এ বছরের নভেম্বর থেকে দেখা যাচ্ছে যে প্রতি তিন দিনের মাঝে যেকোনো একদিন দিনের কোনো না কোনো সময়ে ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নগরীতে রূপান্তরিত হয়েছে এবং তার বায়ুর মান সূচক ৩৩০ এর উপরে থাকছে’, বলেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ডিন মজুমদার আরও জানান, গত ৮ বছরের চেয়ে গড়ে এই বছরে ১০ ভাগেরও বেশি বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে যা একটা বড় শঙ্কার বিষয়।

আগের কয়েকটি বছরের ধরন অনুযায়ী, বাংলাদেশে সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বায়ুর মান এতটাই খারাপ থাকে যে এই পাঁচ মাসে সারা বছরের প্রায় ৬৫ শতাংশ বায়ুদূষণ হয়ে থাকে।

আগের সব রেকর্ডকে ভেঙে বারবার দূষণের তালিকায় বারবার ঢাকার শীর্ষে চলে আসার পেছনে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণকে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

নির্মাণকাজ : রাজধানীতে সারাবছরই ছোট-বড় অজস্র ভবন নির্মাণ এবং রাস্তা মেরামতের কাজ চলে। এর পাশাপাশি গত কয়েক বছরে যোগ হয়েছে মেট্রো-রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন বড় প্রকল্প।

যেকোনো ধরনের নির্মাণকাজ করার সময় বায়ু দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে সেসব নিয়ম পালনের তোয়াক্কা করতে দেখা যায় না।

রাস্তা ও ভবন নির্মাণ বা মেরামতের সময় ধুলাবালি যেন বাতাসের সঙ্গে যেন মিশে না যায়, সেজন্য নির্মাণ স্থানে যথাযথ অস্থায়ী ছাউনি বা বেষ্টনী দেয়ার নিয়ম রয়েছে। সেইসাথে, বেষ্টনীর ভেতর ও বাইরে নির্মাণ সামগ্রী (মাটি, বালি, রড, সিমেন্ট ইত্যাদি) যথাযথভাবে ঢেকে রাখা এবং দিনে কমপক্ষে দুইবার স্প্রে করে পানি ছিটানোর কথা বলা আছে এতে।

ইটভাটা ও শিল্প কারখানা : দূষণবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ক্যাপস-এর ‘দেশব্যাপী ৬৪ জেলার বায়ু দূষণ সমীক্ষা ২০২১’ অনুযায়ী, ঢাকার আশেপাশের প্রায় ১২০০ টি ইটভাটা, ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প কারখানা আছে, যেগুলো দূষণের অন্যতম কারণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ ইটভাটা এখনও সনাতন পদ্ধতিতে চলছে। এইসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা, কাঠ ব্যবহার করা হয়। ফলে এটা থেকে প্রচুর ছাই তৈরি হয় এবং কার্বন মনোঅক্সাইড, সালফার অক্সাইড ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো দূষিত কণা বাতাসের সঙ্গে মেশে।

বায়ু দূষণ হ্রাস করার লক্ষ্যে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯)’ শীর্ষক আইনও গৃহীত হয়। কিন্তু সেই আইনেরও তেমন প্রয়োগ নেই।

যানবাহন : শহরের যে কোনো রাস্তায় কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই দেখা যাবে, চারপাশকে কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন করে বিকট শব্দে ছুটে চলছে বিভিন্ন ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বিশেষ করে বাস ও ট্রাক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে এখনো অবলীলায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি ঘুরে বেড়াতে পারছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং ট্র্যাফিক পুলিশদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে।

বর্জ্য পোড়ানো : ক্যাপসের গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকার যেসব এলাকায় বর্জ্য পোড়ানো হয়, সেসব এলাকাতেই বায়ু দূষণ বেশি হচ্ছে। ময়লার স্তূপ যেখানে থাকে, সেখানে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। অনেকসময় এই মিথেন গ্যাসের দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার জন্য পরিচ্ছন্ন কর্মীরা আগুন জ্বালায়। আবার, অনেক বাসাবাড়িতে বা মহল্লায় বর্জ্য পোড়ানোকে সেরা সমাধান হিসেবে ভাবা হয়।

অধ্যাপক মজুমদার বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা শহরের অন্তত ৫০ টি স্থানে বর্জ্য পোড়ানো হয়। এই বর্জ্য পোড়ানো একটি ভুল ধারণা। এটির কারণে যে বায়ু দূষণ হয়, এটি মানুষের মাথায় থাকে না।’

ট্রান্স-বাউন্ডারি এয়ার পলিউশন
বর্ষাকালে বাংলাদেশের বায়ু ভালো থাকলেও জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারির দিকে দিল্লি, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশসহ ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে ‘ট্রান্স-বাউন্ডারি ইফেক্ট’ হিসেবে বাংলাদেশে দূষিত বায়ু প্রবেশ করে। এটিকে বলে ট্রান্স-বাউন্ডারি এয়ার পলিউশন বা আন্তঃমহাদেশীয় বায়ুদূষণ।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ফসল সংগ্রহ করার পর খড়-গাদাগুলোকে পুড়িয়ে দেয়া এবং দীপাবলির কারণ দিল্লির বায়ুদূষণ শীতকালে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এবছরও দীপাবলির সময় দিল্লির বায়ু বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল।

‘ভারত ও বাংলাদেশে যে বছর ভালো বৃষ্টি হয়, সে বছর বাতাস ভালো থাকে। তখন দিল্লি হয়ে যে বাতাস আমাদের দেশে আসে, সেই বাতাসে দূষিত কণা কম থাকে। জুলাই মাসে ভারত এবং বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা। কিন্তু এবার জুন-জুলাইতে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে।’ সূত্র : বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
© All rights reserved © 2023 digantabangla24.com