দুর্গাপুর(নেত্রকোনা)প্রতিনিধি : আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নেত্রকোনা-১ আসনে (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ২২ জন প্রার্থী। গত শনিবার সকাল ১০ টা থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে এ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মনোনয়ন ফরম বিক্রয় সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেমন্ড আরেং।
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ:সভাপতি মানু মজুমদার ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন, সাবেক সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস, মোশতাক আহমেদ রুহী, আ.লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য রেমন্ড আরেং, কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক তালুকদার, দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস আরা ঝুমা তালুকদার, যুব লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. আতাউর রহমান খান আঁখির, একেএম জিয়াউল হক, যুব লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য মো. এরশাদুর রহমান মিন্টু, আ.লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য মোস্তফা জামাল লিটন ও গীতিকার সুজন হাজং, দুর্গাপুর উপজেলা আ.লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ ফারুক আহমেদ তালুকদার, আ.লীগ নেতা শাহ কুতুব উদ্দিন তালুকদার রুয়েল, এডভোকেট মুজিবুর রহমান, জেলা আ.লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ওসমান গনি, কলমাকান্দা উপজেলা আ.লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রফিকুজ্জামান খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহতাব উদ্দিন মাতু, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক তিতাস রায় রানা, আ.লীগ নেতা মো. শহিদুল ইসলাম, শাহ্ মোহসীন, তপন কুমার তালুকদার ও মোশারফ হোসেন ডন।
আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আওয়ামী লীগের টিকিট চাইছেন সবাই। মনোনয়ন পেতে তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে করছেন লবিং তদ্বির। অনেকে নিজের পাল্লা ভারি করার জন্য স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে রেখেছেন। গত ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এসব নেতা ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে এলাকায় আনন্দ মিছিলও করেছেন। এরপর থেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঢাকায় অবস্থান করছেন। এসব কর্মী-সমর্থকরা পছন্দের নেতার মনোনয়ন পত্র সংগ্রহসহ বিভিন্ন ছবি সমর্থকদের দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে প্রচারণা ও দোয়া চাচ্ছেন।
এ নিয়ে এমপি মানু মজুমদার বলেন, নেত্রকোনা-১ আসনের বর্ডার সড়ক, দুর্গাপুরের সোমেশ^রী নদীতে ব্রীজ, স্থল বন্দর চালুকরণ, সাদা-মাটি প্রকল্প চালু করণ সহ কলমাকান্দা-দুর্গাপুরের উন্নয়নে নানামুখী কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। সারাদেশে মহামারি করোনা‘র কারনে আমার অনেক প্রকল্পই স্থবির হয়েছিলো। এ সকল প্রকল্প নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথাও বলেছি। দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি আমার নির্বাচনী এলাকায় উন্ন্য়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দল আমাকেই মনোনয়ন দিবে।
সাবেক এমপি মোশতাক আহমেদ রুহী বলেন, নেত্রকোনা-১ আসনে আমি এমপি থাকা কালীন সময়ে যে উন্নয়ন হয়েছে তা আর কেউ করতে পারেনি। এর মধ্যে দুর্গাপুরের দুঃখ শুকনাকুড়ি সেতু উল্লেখযোগ্য। আমার আমলে উপজেলাতে কোন চাঁদাবাজী হয়নি, চাকরি দিয়ে আর্থিক সুবিধা নেয়া বন্ধ ছিলো। বিএনপি জামায়াতের নৈরাজ্য বন্ধ্যে দুই উপজেলায় প্রতিদিনই অবরোধ বিরোধী কার্যক্রম করে যাচ্ছি। এসকল বিষয় বিবেচনায় করে, আমি মনে করি দল আমাকে মনোনয়ন দিবে।
সাবেক এমপি ছবি বিশ্বাস বলেন, নেত্রকোনা-১ আসনে আমি এমপি থাকা কালীন কোন প্রকার অনিয়ম হয়নি। সাধঅরণ মানুষের পাশে থেকে রাজনীতি করেছি। আমার আমলে দুর্গাপুর শ্যামগঞ্জ সড়ক, কলমাকান্দা ঠাকুরাকোনা সড়ক উন্নয়ন সহ নানা ধরনের উন্নয়ন হয়েছে। বিএনপি জামায়াতের নৈরাজ্য আমি গুরুতর আহত হয়েছি, সন্ত্রাসীরা আমার গাড়ী পুড়িয়ে দিয়েছে। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সকলে মিলে নৌকার নির্বাচন করতে হবে। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দিবে।
তরুন নেতা রোটারিয়ান আতাউর রহমান আঁখির বলেন, দুর্গাপুর কলমাকান্দা এলাকায় বিগত করোনার সময়ে নিজ অর্থায়নে প্রতি ঘরে ঘরে মাক্স বিতরণ, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ্যদের মাঝে পরিবেশবান্ধব ঘর বিতরণ সহ নেত্রকোনা -১ আসনের যুব সমাজকে কাজে লাগাতে, নানা ধরনের উন্নয়ন মুলক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আমি সাধঅরণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে মনোনয়ন কিনেছি। এবারের নির্বাচন একটু ভিন্নধরনের, সেইদিক থেকে দল আমাকেই মনোনয়ন দিবে।
আ.লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য গীতি কবি সুজন হাজং বলেন, দেশের সফল প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি সেক্টরে যে উন্নয়ন করেছেন, এরই ধারা অব্যাহত রাখতে পুনরায় আ‘লীগকে রাস্ট্রক্ষতায় আনতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমি প্রায় ১০টি গান লিখেছি। শেখ রাসেল কে নিয়ে গান লিখেছি, আ‘লীগকে নিয়ে গান লিখেছি। বাংলাদেশ ও ভারতের খ্যাতনামা শিল্পীরা এই গান গেয়েছেন। ভারতে গান করতে গিয়ে দেখেছি, শুধু দেশেই নয় বিদেশেও শেখ হাসিনার কত সুনাম রয়েছে। তিনি জাতীয় সংসদে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মানুষকে এমপি করেছেন। হাজং কমিনিটি থেকে এবার আমি মনোনয়ন কিনেছি, আশা করছি দল আমাকে মনোনয়ন দিবে।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস আরা ঝুমা তালুকদার বলেন, উত্তর ময়মনসিংহের সিংহপুরুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন তালুকদার আমার বাবা। আমি পারিবারিক ভাবেই বাবার কাছ থেকে কিভাবে মানুষের সেবা করতে হয়, কিভাবে রাজনীতি করতে হয় তা জেনেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা কালে তা আরো ভালো করে জানতে পেরেছি। আমি কোন কোন সুবিধা নিতে এমপি হতে চাইনা। দেশের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শ বুকে নিয়ে সাধারণ মানুষের সেবা করতে চাই, আ‘লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে কাজ করতে চাই, আশা করছি দল আমাকেই মনোনয়ন দিবে।
তরুন আ‘লীগ নেতা অধ্যক্ষ ফারুক আহমেদ বলেন, আমি পারিবারিক ভাবেই রাজনৈতিক শিক্ষা পেয়েছি। ছাত্র জীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণীত হয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পরবর্তিতে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেছি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমি মনোনয়ন কিনেছিলাম, এবারও কিনেছি। মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং শহীদ পরিবারের সন্তান ও একজন শিক্ষক হিসেবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করতে চাই। নেত্রকোনা-১ আসনে এ যাবৎ পরিকল্পনা মোতাবেক কোন কাজই হয়নি। আমি মনোনয়ন পেলে এ আসনে সকলকে নিয়ে পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করবো। আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিবেন।
আ‘লীগ নেতা শাহ্ কুতুব উদ্দীন তালুকদার রুয়েল বলেন, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন তালুকদার এ আসন থেকে আপনাদের ভোটেই বার বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। দুর্গাপুর-কলমাকান্দাকে সাজাতে আমার বাবার অনেক পরিকল্পনা ছিলো। বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তৃনমুলের ত্যাগি আ‘লীগ নেতাদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছি। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী ও দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে, সকলকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। আশা করছি এবার দল আমাকেই মনোনয়ন দিবে।
বাংলাদেশ আ‘লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য রেমন্ড আরেং বলেন, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা, এশিয়া মহাদেশের মধ্যে একজন অন্যতম নেত্রী। আমি গর্বিত, আমি এমন নেত্রীর দল করি। আ‘লীগের একজন নগন্য কর্মী হিসেবে আমি মনে করি ‘‘বাংলাদেশ মানেই শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ’’। দেশের বিভিন্ন এলাকায় শেখ হাসিনার উন্নয়নের লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে দেখেছি বাংলার মানুষ শেখ হাসিনাকে কতটুকু ভালোবাসে। শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার, দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে। আমি নেত্রকোনা ১ আসনে দলীয় মনোনয়ন কিনেছি, আমি সকলের দোয়া চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাকেই যোগ্য মনে করবেন, তাকেই সিলেক্ট করবেন, সেই সিদ্ধান্ত আমাদের মেনে নিয়ে মাঠে কাজ করতে হবে।
মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যান্য নেতাদের ধারনা, বরাবরের চেয়ে এবারের জাতীয় নির্বাচন একটু ভিন্ন রকমের হবে। আওয়ামীলীগ আবারো সরকার গঠন করবে। তাই অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন, জনগনের ভাগ্য উন্নয়নে এমপি হয়ে এলাকায় কাজ করবেন। দলীয় মনোনয়ন না পেলে, দল যাকে মনোনয়ন দিবে, তারপক্ষেও কাজ করবেন বলে জানান মনোনয়ন প্রত্যাশি আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা।
Leave a Reply