সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:৩১ অপরাহ্ন

অ্যান্টিবায়োটিককে হার মানাচ্ছে জীবাণু, বিপন্ন ওষুধের ভবিষ্যৎ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৬৯ পঠিত

দিগন্ত ডেক্স : কোনো ইনফেকশনে কষ্ট পাচ্ছেন? তাও যদি হয় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশান বা ইউটিআই-এর মতো কষ্টদায়ক ইনফেকশন? অনেকেই এই ইনফেকশনের জন্য ডাক্তারের কাছ থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ পেয়ে থাকেন।

তিন থেকে পাঁচ দিন ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবেন, এমনই জাদু এই অ্যান্টিবায়োটিকের। কিন্তু এই অ্যান্টিবায়োটিক না থাকলে রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে কিডনি বা রক্তেও। সঠিক সময়ে অ্যান্টিবায়োটিক না খেলে এমন বিপদ হতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ করতে পারে যে জীবাণু : অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া দুনিয়া কোনো ভয়ের সিনেমার মতো শুনতে লাগলেও আসলে তা বাস্তব। কোনো জীবাণুকে ঠেকাতে যে অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা হয়েছে, জীবাণুরা এখন সেই অ্যান্টিবায়োটিককেও প্রতিরোধ করতে পারছে।

অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ, একটি নির্দিষ্ট জীবাণুকে নির্জীব করা। কিন্তু সম্ভাবনা থেকেই যায় যে জীবাণু তাতে না মরে বরং অ্যান্টিবায়োটিককে রোধ করবার ক্ষমতা নিজের মধ্যে সৃষ্টি করে নেয়।

শুধু তাই নয়, সংখ্যায় কয়েক গুণ বেড়ে গিয়ে অ্যান্টিবায়োটিককে ঠেকানোর ক্ষমতাও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবাণুর মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা এতে প্রশ্নবিদ্ধ হবে, এমনটা নয়।

কতটা অকার্যকর হবে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক? ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র জানায় যে ২০১৯ সালে, অ্যান্টিবায়োটিকরোধী জীবাণু সংক্রমণের কারণে বিশ্বের প্রায় ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

এই ধরনের সংক্রমণ ইউরোপে প্রতি বছর ৬ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি, জানাচ্ছে ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল। এই একই কারণে ইউরোপে মারা যান ৩৩ হাজার মানুষ। ফলে অ্যান্টিবায়োটিকের নির্ভরযোগ্যতার দিকে প্রশ্ন তুলছেন বিজ্ঞানী ও ডাক্তাররা।

যুক্তরাজ্যের ওয়ারিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস ডাওসন কয়েক দশক ধরে জীবাণুদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘তারা একটা সময়ে কাজ করা বন্ধ করে দেবে। ফলে আমাদের বিকল্প খুঁজতেই হবে। আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’

যেভাবে গড়ে ওঠে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা : ডাক্তারেরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শ দেন বলে অ্যান্টিবায়োটিকের সংস্পর্শে খুব ঘন ঘন আসে জীবাণুরা।

অন্যদিকে, শরীর একটু ভালো লাগতে শুরু হলেই রোগীরা নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন, পুরো কোর্স শেষ না করেই।

তাতে শরীর ভারো লাগলেও শরীরের ভেতরের সংক্রমণ বা ইনফেকশন পুরোপুরি সারে না। আর পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়ায় জীবাণুও মরে না। অল্প মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে শিখে যায় জীবাণু। বেশ কিছু দেশে, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি হয়, যা এই ওষুধের ভুল ব্যবহার বাড়ায়।

কৃষি খাতেও ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হয় অ্যান্টিবায়োটিক। পোকামাকড় তাড়াতে ফল বা সবজির গায়ে স্প্রে করা হয় বা মাংস উৎপাদনের সময়েও ব্যবহার করা হয় অ্যান্টিবায়োটিক।

এতে করে আমাদের খাবারের সাথেও মিশে যায় স্বল্পমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক, যা আরও সাহায্য করে বিভিন্ন জীবাণুকে৷

যেমন হবে ভবিষ্যতের ওষুধ : অ্যান্টিবায়োটিকরোধী জীবাণুকেও জয় করতে পারবে এমন ওষুধ তৈরি করতে প্রয়োজন গবেষণা, যার জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ। কিন্তু এই দিকে সেভাবে এখনও বিনিয়োগ নেই বলে বেশ কিছু বিজ্ঞানীরা গবেষণার এই ধারা থেকে সরে আসছেন।

অধ্যাপক ক্রিস ডাওসন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা শুধু অ্যান্টিবায়োটিককেই হারাচ্ছি না, যে গবেষকেরা তা আবিষ্কার করেছেন, তাদেরকেও হারিয়ে ফেলছি।’

২০২০ সালে এই বিষয়ে গবেষণার জন্য মোট বিনিয়োগের মূল্য ছিল দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কিছু বেশি। ২০২২ সালে তা ছিল ১ দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে, বিনিয়োগ কমে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৬৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগের নিম্নমুখী যাত্রা কোনো মতেই সমাধান নয়। ডাওসনের মতে, অ্যান্টিবায়োটিকরোধী জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই ‘গোটা বিশ্বজুড়ে নৈতিক প্রাধান্য’ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
© All rights reserved © 2023 digantabangla24.com