কলমাকান্দা(নেত্রকোনা)প্রতিনিধি : ” হাওর সুরক্ষায় জলবায়ু তহবিল নিশ্চিত কর ” এ প্রতিপাদ্য আলোকে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী গীতি- আলোখ্য পরিবেশনা, প্রকৃতি বন্ধনা, আলোচনা সভার মধ্যে দিয়ে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় হাওর জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রংছাতি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামে নেত্রকোনা সম্মিলিত যুব সমাজের আয়োজনে ও জাতীয় পরিবেশ পদক প্রাপ্ত বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের সহযোগিতায় এ হাওর যুব জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে চন্দ্রডিঙ্গার পাহাড়ি নদী বেড়িবাধের সভাপতি সুনীল ম্রং এর সভাপতিত্বে প্রধান অলোচক ছিলেন, বারসিকের পরিচালক ও গবেষক পাভেল পার্থ ।
বারসিকের জেলা প্রোগ্রাম অফিসার রনি খানের সঞ্চালনায়, অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী গবেষক মো. অহিদুর রহমান, নেত্রকোনা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূরুজ্জামান, সাংবাদিক লাভলু পাল চৌধুরী, উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সৌহার্দ্য দারিং, সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম সম্রাট, উপ-আঞ্চলিক কর্মকর্তা শংকর ম্রং, সুবিমল ম্রং, নেত্রকোনা সম্মিলিত যুব সমাজের সভাপতি পার্থ প্রতিম সরকার, চন্দ্রডিঙ্গার পাহাড়ি নদী বেড়িবাধের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান মিয়া ও বারসিক কলমাকান্দার সমন্বয়কারী গুঞ্জন রেমাসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স সাংবাদিকবৃন্দ।
দিনব্যাপি এই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হাওরবাসী কৃষক, মৎসীজীবী, আদিবাসী, যুবসহ নানা পেশাজীবী জনগণ তাদেও ক্ষয়ক্ষতি এবং দাবি তুলে ধরেন। হাওরের প্রাণ-প্রকৃতি ও সংস্কৃতি রক্ষায় নানা শ্লোগান সংবলিত ফেস্টুন নিয়ে পাহাড়ি বালিতে বিধ্বস্ত জমিতে দাঁড়িয়ে ‘প্রকৃতি-বন্ধন’ অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে হাওর, পাহাড় ও সমতলের বৈচিত্র্যময় কৃষিফসল, বিলুপ্তপ্রায় খাদ্য, জলবায়ু সহনশীল দেশী ধানের জাত প্রদর্শিত হয়।
দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত ব্যতিক্রমধর্মী এই সম্মেলনে আলোচনার পাশাপাশি ছিল হাওরাঞ্চলের গান, নাটক, আদিবাসী নৃত্য ও ধামাইল নাচের ঐতিহ্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। হাওরাঞ্চলের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সম্মিলিতভাবে এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন।
বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাহাড়ি ঢল ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাত বেড়েছে এবং এসব কারণে পাহাড়ি ঢলের আগ্রাসনও বেড়েছে। হাওরের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়, কিন্তু এর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হাওরবাসীকে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ধনী ও উন্নত দেশের বিশ্ব-নেতারা বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল গঠনের অঙ্গীকার করলেও বারবার এই অঙ্গীকার ভঙ্গ করছেন। আসন্ন দুবাই জলবায়ু সম্মেলনে এই তহবিল গঠন করতে হবে। হাওরাঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতিকে আমলে নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল হাওরাঞ্চলের জন্যও বরাদ্দ দিতে হবে।
হাওর যুব জলবায়ু সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন নেত্রকোণা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জনাব বিপিন বিশ্বাস, উপজেলা যুব কর্মকর্তা , ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ক লেখক আলী আহমদ খান আইয়োব, ইউপি সদস্য , লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, নৃ-বিজ্ঞানী সৈয়দ আলী বিশ্বাস, বাঁধ রক্ষা কমিটির সভাপতি সুনীল ম্রং, জলবায়ু ও নগর গবেষক জাহাঙ্গীর আলম, লেখক ও বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী অহিদুর রহমান, সমাজকর্মী শংকর ম্রং, সংস্কৃতিকর্মী মো. আলমগীর, কৃষক মনোরমা আজিম প্রমুখ।
বারসিকের পরিচালক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, পাহাড়ি ঢল হাওরের জন্য সামগ্রিকভাবে দুর্যোগ পরিস্থিতি তৈরি করে প্রতিবছর। পাহাড়ি ঢলের সাথে উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি বালির আগ্রাসন এই ঝুঁকিতে আরো বিপন্ন করে তুলছে। হাওরাঞ্চলের আন্ত:রাষ্ট্রিক নদী ও অববাহিকার যৌথ সংরক্ষণ বিষয়েও আমরা দ্বি রাষ্ট্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করিনি। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে এই সংকট আরো জটিল এবং তীব্র আকার ধারণ করছে প্রতিনিয়ত। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সুরক্ষা এবং বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলের জন্য সোচ্চার হচ্ছে মানুষ। যুবরা গুরুত্বপূর্ণভাবে এগিয়ে আসছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জলবায়ু ফোরাম গুলোতে বারবার জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল গঠনের জোর দাবি জানিয়ে আসছে। প্যারিস চুক্তিসহ (২০১৫) নানা ঘোষণা তৈরি করলে বারবার বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সকল অঙ্গীকার ভঙ্গ করছেন। আমরা আশা করি বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তাদের অঙ্গীকার পূরণে দ্রুত তৎপর হবেন।
ওই সম্মেলনে হাওর সুরক্ষায় জলবায়ু তহবিল নিশ্চিত করণের জন্য মানববন্ধন সহ হাওর সুরক্ষায় কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
Leave a Reply