বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৭ অপরাহ্ন

এই মাত্র পাওয়া

বিনা চিকিৎসায় মরতে বসেছে আমেনা, বোন মনিকার পড়াশুনাও বন্ধের পথে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট : সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩
  • ১৪২ পঠিত

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা)প্রতিনিধি : পরিবারে অভাব-অনটনের সংসারে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমেনা আক্তার (২৬) নামের এক যুবতী। গত তিন বছর ধরে বিছানা থেকে উঠে চলাফেরা করতে পারছে না আমেনা। অর্থ সংকটে তার চিকিৎসা করাতে পারছেন না ভাই আল আমিন। তার বাবা প্রায় পনের বছর আগে তাদেরকে তার নানার বাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে যায়। মা মমতাজ বেগম তিনিও পাঁচ বছর আগে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বোন মনিকা আক্তার দুর্গাপুর মহিলা কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। টাকার অভাবে তার পড়াশুনাও প্রায় বন্ধের পথে। আমেনা আক্তারের বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের উদাপাড়া গ্রামে। তার পিতার নাম মো. জসিম উদ্দিন।

পারিবারিক ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, এক ভাই-দুবোনের মধ্যে আমেনা সবার বড় । মা মারা যাওয়ার পর থেকে হঠাৎ করে আমেনার আচরণ অস্বাভাবিক হতে শুরু করে। একপর্যায়ে মানসিক ও শারিরীক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে আমেনা। পরে তাকে নিয়ে যায় পাশ্ববর্তী উপজেলা দুর্গাপুর সরকারি হাসপাতালে। সেখানে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা দেওয়ার পর সুস্থ না হওয়ায় আমেনাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিতে পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। নুন আনতে পান্তা ফুরায় যে সংসারের । তারা কি ভাবে ঢাকায় রেখে চিকিৎসা করাবেন ? এরপর আমেনাকে স্থানীয় কবিরাজি চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে চেষ্টা করা হয়।

একদিকে আমেনার চিকিৎসা, অন্যদিকে সংসার খরচ, আবার বোন মনিকার পড়াশুনারও খরচ। সবমিলিয়ে ভাই আল আমিনের পক্ষে এত টাকা খরচ বহন করা কোন ভাবেই যেন সম্ভব হচ্ছেনা। তাই বিনা চিকিৎসায় মরতে বসেছে আমেনা আক্তার। টাকার অভাবে বোন মনিকারও পড়াশুনা প্রায় বন্ধের পথে রয়েছে।

এ নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি ভাঙ্গাচুরা ঘরের বারান্দায় ত্রিপল বিছিয়ে শুয়ে আছে আমেনা আক্তার। পাশে আরেটি ঘরে তার বোন মনিকা রান্না করছেন। বৃষ্টির পানি থেকে বাঁচতে সেই ঘরটির চালের টিনগুলো প্লাষ্টিক কাগজ দিয়ে মোড়ানো রয়েছে। অনেক চেষ্টার পরও আমেনার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে কথা হয় মনিকার সাথে তিনি জানান, তারা যখন ছোট। ঠিক তখনই তার বাবা তাদের রেখে ঢাকায় চলে যান। এরপর থেকে তার বাবা তাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তার বোন আমেনার বয়স যখন বিশ। ঠিক তখনই সে মানসিক ও শারিরীক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে নেওয়া হয় দুর্গাপুর হাসপাতালে। সেখানের চিকিৎসক পরামর্শ দেন আমেনাকে নিয়ে ঢাকায় যেতে। কিন্তু টাকার অভাবে ঢাকায় নেওয়া সম্ভব হয়নি। স্থানীয় কবিরাজের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয় তার। কিছুদিন পরে সে মানসিক ভারসাম্য হরিয়ে ফেলে। বর্তমানে সে বিছানায় মৃত্যুযন্ত্রায় কাতরাচ্ছে। এ অবস্থায় তিনিসহ তার পরিবার সহ্য করতে পারছেনা। তার ভাই আল আমিন ইলেক্ট্রিকের কাজ করে যা পায় তা দিয়ে সংসার খরচ চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। তারমধ্যে আবার এক বোনের চিকিৎসা এবং অপর বোনের পড়াশুনার খরচ চালানো তার ভাইয়ের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

দুর্গাপুর মহিলা কলেজের প্রভাষক তোবারক হোসেন খোকন বলেন, মনিকা আক্তারের ইচ্ছে পড়াশুনা করে পুলিশ কর্মকর্তা হবে, সে আমাদের কলেজের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তার বড় বোনের অসুস্থ্যতার কারণে মনিকা নিয়মিত কলেজে আসতে পারছে না। আর বোনের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্যও তার পরিবারের নেই। সরকারি ভাবে আমেনার চিকিৎসার ব্যবস্থা হলে, মনিকা‘র পড়াশোনা করতে আর কোন বাঁধা থাকতো না। এ ব্যাপারে তিনি উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।

কলমাকান্দার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে আমেনার পরিবারের কেউ তার সাথে যোগাযোগ করেনি। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। আমেনার চিকিৎসার জন্য সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। আর টাকার অভাবে মনিকার পড়াশুনা যাতে বন্ধ না হয় সেজন্যে সবসময় পাশে থাকবে উপজেলা প্রশাসন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
© All rights reserved © 2023 digantabangla24.com