নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে দামি ব্রান্ডের মোটরসাইকেল চুরি করে বিক্রি করায় অভিযুক্ত সেই রাফাতুল ইসলাম রুবেলকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। কিন্তু একই মামলার অন্য আসামী গোলাম মোস্তফা ওরফে টেরা মোস্তফা অদৃশ্য শক্তির ইশারায় আজও অধরাতে রয়ে গেছেন। রুবেল সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কলাগাঁও গ্রামের বহুল আলোচিত মদ, হুন্ডি ও অস্ত্র চোরাকারবারী রফিকুল ওরফে কালা রফিকের সহোদর ভাই।
থানা পুলিশ জানায়, তাহিরপুর থানায় গত ২৯ অক্টোবর দায়েরকৃত মোটরসাইকেল চুরির মামলায় রুবেল এজাহার নামীয় আসামি হিসাবে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। বৃহস্পতিবার গোপনে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিতে যান তিনি। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
কিন্তু একই মামলার অপর আসামী উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের দুধের আউটা গ্রামের গোলাম মোস্তফাকে ধরতে পারেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন জানান, প্রশাসনে বেশ প্রভাব রয়েছে গোলাম মোস্তফার। তিনি দুদকে অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খাঁর ভায়রার ছেলে। এছাড়া দুদকে অভিযুক্ত তার দুই ছেলে আবুল কালাম খাঁ পারুল, আবুল বাশার খাঁ নয়নের গাড়িচালক ও দেহরক্ষী এই গোলাম মোস্তফা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এন্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়–য়া সাংবাদিকের কিশোর ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় ফাঁসান এই মোস্তফা ও তার গ্যাং।
তার এই পরিকল্পনায় অংশ নেয় কয়লা,অস্ত্র চোরাকারবারী, নারী নির্যাতন ও ডাকাতি মামলার আসামী জামাল উদ্দিন ওরফে জামাল ডাকাত। এছাড়া এই চক্রের আরও সদস্যরা হলেন, সুনামগঞ্জের কলাগাঁও সীমান্তের কলাগাঁও গ্রামের বহুল আলোচিত মাদক, হুন্ডি ও অস্ত্র চোরাকারবারী রফিকুল ওরফে কালা রফিকের সহোদর ভাই রুবেল এবং উপজেলার পৈলনুপুর গ্রামের শিক্ষক পেঠানো মামলা আসামীর বাবা দুলাল ওরফে টিন দুলাল।
উল্লেখ্য, টেকেরহাটের নবম শ্রেণির ওই ছাত্রের বাবা একটি শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকের স্টাফ রিপোর্টার। অতীতে এই চক্রের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় তারই প্রতিশোধ হিসেবে ওই সাংবাদিকদের ছেলেকে মোটরসাইকেল চুরির মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
থানা পুলিশের নামে সীমান্তের চোরাচালানসহ চাঁদা আদায়কারী স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত অস্ত্র চোরাকারবারী নজরুল ওরফে বোতল নজরুলকে নিয়ে অতীতে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন ওই সাংবাদিক।
এছাড়া সুনামগঞ্জ সীমান্তে একাধিক চক্রের সন্ত্রাস, নৌ পথে চাঁদাবাজি, কয়লা চুরি, ডাকাতি, জাদুকাটা নদীর বালু পাথর চুরি লুপাট, কয়লা-চুনাপাথর চুরি ডাকাতির সিন্ডিক্যাট বাণিজ্য, স্কুল শিক্ষক পেটানোর ঘটনা এবং বহুল আলোচিত মানিক হত্যাকান্ডসহ নানা সংবাদ প্রকাশ করেছেন ওই সাংবাদিক। সন্ত্রাসী চক্র সাংবাদিকের কলমকে থামাতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে স¤প্রতি তার স্কুল পড়ুয়া কিশোর ছেলেকে ফাঁসানোর কাজটি করেছে।
এর আগে একই চক্র শারদীয় দুর্গেপুজার সময় ওই ছাত্রের সীমান্তের টেকেরঘাট লাকমায় থাকা প্রয়াত নানা বাড়ির শয়নকক্ষে কৌশলে বিদেশি মদের কার্টুন ও পিস্তল রেখে ফাঁসানোর অপচেষ্টা করে। তবে প্রমাণসাপেক্ষ তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
এর আগে ২০১৪ সালে সংবাদপত্রে চক্রটির অপকর্ম তুলে ধরেন ওই সাংবাদিক। এতে ক্ষুব্দ হয়ে ওই বছরের ২৯ মার্চ সাংবাদিকদের ৪র্থ শ্রেণিতে পড়া ছেলের ওপর এসিড নিক্ষেপ করে তারা।
চলতি বছরের ৩১ আগষ্ট একই চক্রের সদস্য ইয়াবা কামালের নেতৃত্বে দু’দফায় মোটরসাইকেল চাঁপা দিয়ে ওই ছাত্রকে আহত করে।
এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও থানার তৎকালীন (বদলীকৃত) ওসি মো. আতিকুর রহমান, ডিজিটাল নিরাপওা আইনে দায়ের করা মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই জহুর লাল দত্ত বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। এতে ওই চক্রটি আরও বেশি করে সাংবাদিক পরিবারকে হয়রানীর সুযোগ পেয়ে যায়। কিশোর গ্যাং লেলিয়ে দেয় তারা।
উপায় না পেয়ে ভুক্তোভোগী সাংবাদিক বিষয়টি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এক বিশেষ মতবিনিয়ময় সভায় অবহিত করে ওই সভায় সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ তার পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা, মামলা ও হয়রানীর বিষয় তুলে ধরা হয়।
এ সময় সভায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিজিবি অধিনায়ক, জেলার বিভিন্ন থানার ওসি, ইউএনও ও জেলা পর্যায়ে কর্মরত সকল গণমাধ্যকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন। এর পরেও দমেনি সীমান্তে চোরাকারবারি ও হত্যামামলার আসামিদের চক্রটি।
স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখের সামনেই চক্রটি ওই সাংবাদিক ও তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেওয়া অব্যাহত রাখে। সাংবাদিক তাতে কর্ণপাত না করে নিয়মিত খবর প্রকাশ করতে থাকেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চক্রটি সাংবাদিকের কিশোর ছেলের ওপর ষড়যন্ত্রমুলক মোটরসাইকেল চুরির ফাঁদে ফেলে ফাঁসিয়ে দেবার মতো অপকীর্তি ঘটায়।
এ নিয়ে তাহিরপুর থানার ওসি মো. আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন, আসামি রুবেলকে শিগগিরই রিমান্ডে নিয়ে এসে ওই সাজানো মোটরসাইকেল চুরির ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হবে। পলাতক মোস্তফাকে আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।