দিগন্ত ডেক্স : ১০ টাকার হিসাবধারীদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ তহবিল থেকে পাড়া-মহল্লা, গ্রামে ছোট ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী, কামার, কুমার, জেলে, ভূমিহীন কৃষক, হকার, দোকানি এবং রিকশাচালকরা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকার জামাতনবিহীন ঋণ নিতে পারবেন। এ ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৭ শতাংশ। রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত নতুন একটি স্কিম পুনর্গঠন করে নীতিমালা জারি করেছে।
কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের পেশাজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুদ্ধার অব্যাহত রাখতে ঋণসীমা ও তহবিলের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। নতুন তহবিলের নাম ‘১০, ৫০ ও ১০০ টাকার হিসাবধারী প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষক, নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, স্কুল ব্যাংকিং হিসাবধারী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য গঠিত পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’। পাঁচ বছর মেয়াদী ৫০০ কোটি টাকার এ স্কিম বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে গঠন করা হয়েছে, যা নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে আবর্তনশীল। তবে প্রয়োজনে মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের আওতায় এ স্কিমের অধীনে ঋণ সুবিধা গ্রহণকারী সব গ্রাহকই হবে বিদ্যমান ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার হিসাবধারী। তবে এ স্কিমের আওতায় ঋণ সুবিধা নেওয়ার জন্য নতুন গ্রাহকদের আবশ্যিকভাবে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে।
এছাড়া যে কোন দুর্যোগে (প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট) ক্ষতিগ্রস্ত (যেমন: নদী ভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, মঙ্গা, অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প, ভবন ধস, কোভিড-১৯ এর মতো অতিমারি ইত্যাদি) প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নিম্ন আয়ের পেশাজীবী এবং চর ও হাওর এলাকায় বসবাসকারী স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ ঋণ সুবিধা পাবেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি ও নারী উদ্যোক্তারা যে কোন ধরনের আয় উৎসারী কর্মকাণ্ডে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ ঋণ সুবিধা পাবেন। স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে সুবিধা বঞ্চিত ও অসচ্ছল স্কুল ব্যাংকিং হিসাবধারীদের (শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীসহ) বৃত্তিমূলক, কারিগরি ও তথ্য প্রযুক্তিসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো উক্ত স্কিমের আওতায় অভিভাবকের পরিশোধ গ্যারান্টির ভিত্তিতে ঋণ সুবিধা প্রদান করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, খেলাপি ঋণগ্রহীতা এ স্কিমের আওতায় ঋণ সুবিধা প্রাপ্য হবেন না এবং বাংলাদেশ সরকার/বাংলাদেশ ব্যাংকের সুদ ভর্তুকির আওতায় অন্য কোনও স্কিমের অধীন ঋণগ্রহীতার প্রাপ্ত ঋণ অসমন্বিত অবস্থায় থাকলে ঐ ঋণগ্রহীতা ঋণ সুবিধা প্রাপ্য হবেন না।
তফসিলি ব্যাংক এ স্কিমের আওতায় গ্রাহকের প্রয়োজনীয়তা যাচাই সাপেক্ষে একক গ্রাহককে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে। গ্রুপ ঋণের ক্ষেত্রে ২-৫ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত গ্রুপকে সদস্য প্রতি সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা করে গ্রুপপ্রতি সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করতে পারবে। গ্রুপ ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে গ্রুপের সব সদস্যই ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। অর্থায়নকারী ব্যাংকের অনুকূলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়নের বার্ষিক সুদ ও মুনাফার হার হবে ১ শতাংশ। ব্যাংক কর্তৃক গ্রাহক পর্যায়ে প্রদত্ত ঋণ ও বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ এবং মুনাফার হার হবে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ। গ্রাহকের ঋণ ও বিনিয়োগের ক্রমহ্রাসমান স্থিতির ওপর সুদ ও মুনাফা আরোপ করতে হবে।
এ স্কিমের আওতায় ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনও নিরাপত্তা জামানত নেওয়া যাবে না। তবে প্রত্যেক ঋণ গ্রহীতার ঋণের বিপরীতে ঋণ গ্রহীতাসহ অনধিক দুইজনের ব্যক্তিগত গ্যারান্টি গ্রহণ করা যাবে। তিন লাখ টাকা ও তদূর্ধ্ব পরিমাণ ঋণ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক নিজস্ব বিবেচনায় সম্পূর্ণ ঋণের বিপরীতে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক নিজস্ব উৎস হতে গ্যারান্টি ফি পরিশোধ করবে। ব্যাংক ও গ্রাহক পর্যায়ে উভয় ক্ষেত্রে গ্রেস পিরিয়ড হবে সর্বোচ্চ ৬ মাস। গ্রেস পিরিয়ড ব্যতিরেকে ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৩ বছর। বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রেস পিরিয়ড বাদে ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ব্যাংকগুলো থেকে সুদ/মুনাফা/সার্ভিস চার্জসহ আসল আদায় করবে এবং ব্যাংকগুলো গ্রেস পিরিয়ড বাদে মাসিক, ত্রৈমাসিক ও ষাণ্মাসিক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) কিস্তিতে গ্রাহকের কাছ থেকে সুদ ও মুনাফাসহ আসল আদায় করবে।