বীরেশ্বর চক্রবর্ত্তী, সাবেক প্রধান শিক্ষক ও প্রশিক্ষক (নাট্ক) উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি, দুর্গাপুর : চিরায়ত সত্য এটাই যে, যাত্রা বা যাত্রাগান যুগে যুগে মানুষকে আনন্দ দিয়েছে। যাত্রার আসরে শোনা যেত বীর পুরুষদের কাহিনি, রাজা-বাদশাহর যুদ্ধের গল্প। লেখাপড়া না-জানা মানুষ যাত্রাগান শুনে অনেক কিছু শিখত। বুঝতে পারত। দেশপ্রেম ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হতো হাজার হাজার মানুষ। বাঙ্গালী সংস্কৃতিতে শক্তিশালী গণমাধ্যম হিসাবে যাত্রার স্বীকৃতি আছে। নাট্যাচার্য শিশির কুমার ভাদুড়ি বলেছেন, ‘আমাদের জাতীয় নাট্য বলিয়া যদি কিছু থাকে তাহাই যাত্রা।’ নাট্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জিয়া হায়দার বলেন ‘যাত্রাই হতে পারে আমাদের জাতীয় নাট্য।’ তবে দুঃখজনক যে, এ সম্ভাবনা আদৌ আমাদের দৃষ্টিগোচর হলো না।
যাত্রাপালার জন্মকথা বড়ই চমকপ্রদ। বৈদিক যুগে বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের দেব-দেবীর উৎসব হতো। ভক্তরা ঢাকঢোল নিয়ে নাচতে-গাইতে গাইতে উৎসবে যোগ দিত। এক জায়গায় এক দেবতার বন্দনা ও লীলাকীর্তন শেষ করে আরেক জায়গায় আরেক দেবতার উৎসবে গান-বাজনা শুরু করত। সূর্যদেবকে উপলক্ষ করে সৌরোৎসব, শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীতে কৃষ্ণযাত্রা, জগন্নাথ দেবের উদ্দেশে রথযাত্রা, দোল পূর্ণিমায় দোল যাত্রা এবং মনসামঙ্গলে ভাষান যাত্রা।’ এই যে, দেবদেবীদের উৎসবে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া- এ ‘যাওয়া’ থেকেই ‘যাত্রা’ কথাটির উৎপত্তি বলে একদল গবেষক মনে করেন। ড. আশরাফ সিদ্দিকীর মতে শব্দটি দ্রাবিড় থেকে এসেছে। কারণ দ্রাবিড়দের মধ্যে এখনো এমন অনেক উৎসব আছে যাকে বলা হয় ‘যাত্রা’ বা ‘যাত্র।’ অন্যদল মনে করেন মধ্যযুগে এ দেশে যে পাঁচালী গান প্রচলিত ছিল, তা থেকে যাত্রার উদ্ভব। যাত্রার প্রথম নিদর্শন মহাপ্রভূ শ্রীচৈতন্য দেবের আমলে ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দশকে। ১৫০৯ সালে অভিনীত পালাটির নাম ‘রু²িণী-হরণ।’ মহাপ্রভূ স্বয়ং এই পালায় অভিনয় করেন। এটি ছিল শ্রীকৃষ্ণের মাহাত্ম প্রচারের জন্য একটি উদ্দেশ্যমূলক ধর্মীয় প্রয়াস।
নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের সাড়ে তিন দশক পর ইংরেজশাসিত বঙ্গদেশে বাংলা নাট্যাভিনয়ের সূচনা করেন রুশ নাগরিক হেরাসিম লেবেডেফ। সে সময়ে গ্রামে-গঞ্জে রাত-ভোর করে দেওয়া যাত্রাগানের আসর বসত। অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বীরভূম জেলার কেঁদুলী গ্রামের শিশুরাম অধিকারী যাত্রাগানে শোনালেন এক নতুন বার্তা। ভক্তি রসাত্মক ভাবধারার মধ্যে তিনি নিয়ে এলেন নতুন জাগরণ। যাত্রাগানের ইতিহাসে তিনি ‘নবযাত্রার পথিকৃৎ’ হিসাবে খ্যাত। শিশুরামের পর পরমানন্দ অধিকারী ও গোবিন্দ অধিকারী বিভিন্ন আঙ্গিকে, বিন্যাসে ও রূপকল্পে যাত্রাকে আরও সময়োপযোগী করে তোলেন। দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ যেমন ঢাকার প্রথম নাটক তেমনি ঢাকা শহরের প্রথম যাত্রাপালা কৃষ্ণকমল গোস্বামীর স্বপ্নবিলাস (১৮৬১)। সুরুচিসম্পন্ন উন্নতমানের পালার পাশাপাশি উনিশ শতকের ৫০ ও ৬০-এর দশকে এক শ্রেণির সস্তা ও বিকৃতির প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল যাত্রাপালায়। সেই অশ্লীলতা ও ভাঁড়ামি থেকে যাত্রাকে মুক্ত করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুললেন আরেক বিশিষ্ট পালাকার মতিলাল রায়। বিভিন্ন পালায় তিনি কথকতা, সংলাপ, অভিনয় ও সংগীতের অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েছেন। গানের ছন্দ ও অনুপ্রাস ব্যবহারের কৌশল তিনি নিয়েছেন দাশরথির পাঁচালী থেকে। নট ও নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষের হাতে পৌরাণিক যাত্রাপালা নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বতন্ত্র মাত্রা পায়। যাত্রা ও নাটকে তার ভাষারীতি যেমন নতুনত্বের দাবি রাখে, তেমনি এক সুললিত ছন্দ আবিষ্কার করে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেন।
১৮৭২ সালে প্রথম কলকাতায় জাতীয় রঙ্গমঞ্চের প্রতিষ্ঠা। এর দু’বছর পর ১৮৭৪ সালে আত্মপ্রকাশ ঘটে বরিশালের মাচরঙ্গের নট্ট কোম্পানি যাত্রা পার্টির। এটিই অবিভক্ত বাংলাদেশে প্রথম পেশাদার যাত্রাদল। স্বত্বাধিকারী ছিলেন দু’জন-শশীচরণ নট্ট ও বৈকুণ্ঠ নট্ট। ১৯৪০ সালের পর নট্ট কোম্পানি ভারতে চলে যায় এবং তাদের স্থায়ী ঠিকানা হয় ১৭, হরচন্দ্র মল্লিক স্ট্রিট, কলকাতা। ১৪৭ বছরের প্রাচীনতম এ দলটি প্রযোজনায়, পালা মঞ্চায়নে, নিত্য নতুন কলাকৌশলে এখনো বাংলাদেশের গৌরব বহন করছে। নট্ট কোম্পানির মা-মাটি-মানুষ, নটি বিনোদিনী, দেবী সুলতানা, অচল পয়সা- এ পালাগুলোর লং প্লেয়িং রেকর্ড বাংলাদেশেও বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। বরিশালের বিল্বগ্রাম থেকে কালীচরণ নট্টের মালিকানায় আরেকটি নট্ট কোম্পানির জন্মকথা জানা যায়। সেটা ১৮৭৫ সাল।
১৯৪৭ পূর্বকালের খুব নামকরা দুটি দল ছিল মানিকগঞ্জের অন্নপূর্ণা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জয়দুর্গা অপেরা। মানিকগঞ্জের তরা গ্রামের কার্তিকচন্দ্র সাহা মাত্র দশ আনা পুঁজি নিয়ে অন্নপূর্ণা গঠন করেন। কলকাতার বহু শিল্পী এখানে অভিনয় করেছেন। উল্লেখযোগ্য পালা ছিল ধরার দেবতা, দাতা হরিশ্চন্দ্র, রাজনন্দিনী ও স্বামীর ঘর। জয়দুর্গা অপেরার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। এ দেশের বেশিরভাগ বিখ্যাত যাত্রাশিল্পী এই দলে অভিনয় করেছেন। বিশিষ্টদের মধ্যে রয়েছেন মন্মথ দত্ত, নয়ন মিয়া, চিত্ত পাল, বিমল বালা, দিগম্বর মালাকার, কালীপদ দাশ ও বনশ্রী মুখার্জি। পুরুষদের মধ্যে নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন এমন কয়েকজন হলেন- নগেন নন্দী, ভাসান নন্দী, ব্রজেন নন্দী, লক্ষ্মী নন্দী। তারা সবাই ‘রানি’ হিসাবে খ্যাত ছিলেন। দলের পালা ছিল প্রতিশোধ, বর্গী এল দেশে, সাধক রামপ্রসাদ, সোনাইদীঘি ও প্রায়শ্চিত্ত। ১৯৭৬ সালে চিত্রপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় এ দলের শিল্পী সমন্বয়ে ‘বর্গী এল দেশে’ পালাটি চলচ্চিত্রায়িত হয়। জয়দুর্গা অপেরার প্রতিষ্ঠাতা ও অধিকারি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় যতীন চক্রবর্তী। অনেকে সম্বোধন করতেন ‘কর্তা’ বলে। উল্লিখিত দলগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। ঐতিহ্য ধরে রাখার উত্তরাধিকারীও এখন আর নেই।
বাংলাদেশের যাত্রাদল এবং যাত্রাভিনয়ের ঐতিহ্যিক ধারায় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে আছেন একজন মহৎ ব্যক্তি, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরের দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা। যিনি আরপি সাহা নামে সমধিক পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশীয় রাজাকারের সহায়তায় পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে পুত্র রবি সাহাসহ তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন ও অপহরণ ঘটনায় যাত্রাশিল্পীদেরও অশ্রæসজল করে তোলে। বিগত শতাব্দীর ’৬০-এর দশকে প্রতি বছর দুর্গাপূজার সময় মহাসমারোহে যাত্রাগান হতো আরপি সাহার পূজা বাড়িতে, আশানন্দ হলে। এখানে বায়না করা হতো শুধু প্রথম সারির জয়দুর্গা অপেরা, বাবুল অপেরা, বাসন্তী অপেরা ও ভোলানাথ অপেরার মতো জনপ্রিয় দলগুলোকে। নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ প্রথম জীবনে আরপি সাহার পূজাবাড়িতে একাধিক দলের যাত্রাগান শুনেছেন।
১৯৭০-৭১ যাত্রা মৌসুমে অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ভোলানাথ অপেরার নৃত্যশিল্পী ছিলেন অঞ্জু ঘোষ, পরবর্তীকালে ঢাকার সিনেমার নায়িকা হিসাবে যার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। যাত্রাদলে অঞ্জু ও মঞ্জু দুই বোন ডুয়েট গাইতেন কিশোর কুমারের সেই হিট গানটি- ‘এক পলকের একটু দেখা, আর একটু বেশি হলে ক্ষতি কি!’ ময়মনসিংহের গণেশ অপেরা, বুলবুল অপেরা এবং নবরঞ্জন অপেরায় অভিনয় করতেন যাত্রাজগতের প্রথম দু’জন মুসলিম যাত্রাশিল্পী নেত্রকোনা জেলার হোগলা গ্রামের আশরাফ আলী এবং একই জেলার পূর্বধলা গ্রামের নয়ন মিয়া। ’৭১-এর মার্চে সেই উত্তাল দিনগুলোতে নয়ন মিয়া ছিলেন বুলবুল অপেরায়। অমলেন্দু বিশ্বাস বাসন্তী অপেরায়। বর্তমান ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈলে অভিনয়ের পাট চুকিয়ে পশ্চিম দিনাজপুরের রায়গঞ্জে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উদ্দেশ্য, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যাত্রাভিনয়ের আয়োজন করা। এদিকে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঢাকায় যখন বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়, ঠিক ওই সময় নেত্রকোনা জেলার হাইস্কুল মাঠে যাত্রানুষ্ঠান চলছিল বাবুল অপেরার। দক্ষিণ ভারতের আহমদনগরের সুলতানা চাঁদবিবির বীরত্বগাথা নিয়ে রচিত হয় ওই পালাটি। ‘চাঁদবিবি’ ছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে মঞ্চস্থ শেষ যাত্রাপালা। এক প্রতিবাদী নারী চরিত্রের সংলাপ ছিল এরকম : ‘জাহাঁপনা, কেন আপনার সৈন্যদলকে অতর্কিতে লেলিয়ে দিয়েছেন আমাদের ওপর? কত ঘরবাড়ি পুড়েছে, কত মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, কত মন্দির-মসজিদ ধ্বংস হয়েছে খবর রাখেন কিছু?’ অবাক, বিস্মিত শিহরিত যাত্রাশিল্পীরা। ঘটনার কী সমান্তরাল যোগাযোগ। পরদিন ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার বার্তাটি বিভিন্ন এলাকার মতো পূর্বধলায়ও এসে পৌঁছে। যাত্রানুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ‘সব প্রস্তুত, যুদ্ধের দূত হানা দেয় পূব দরজায়।’ যাত্রাশিল্পীরাও ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তি সংগ্রামে। সেই থেকে যাত্রাপালা আমাদের বাঙ্গালী সংস্কৃতির প্রতিটি লতা-পাতায় মিশেগেছে অঙ্গ-অঙ্গীভাবে।
বর্তমান সরকারের আমলে দেশের নানা উন্নয়ন হয়েছে। দেশ অনেক দুর এগিয়েছে। অন্যান্য সকল সংস্কৃতির উন্নয়ন হলেও ভাবতে কষ্ট হয় যাত্রাশিল্পীরা আজ রিক্সা চালায়। মঞ্চে রাজা সেজে সাধারণ মানুষদের আনন্দ দেয়া রাজা আজ পথের ভিক্ষেরী। যাত্রা শিল্পকে রক্ষায় তেমন কোন উদ্দ্যেগ নিয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে প্রতি বছর শিল্পী সম্মাননা বাবদ যে আর্থিক সহায়তা করা হয় সেখানে যাত্রা শিল্পীদের নাম অতি নগন্য। আমি একজন যাত্রা শিল্পী হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ বৃহত্তর ময়মনসিংহের কৃতিসন্ত্রান সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের মাননীয় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী জনাব কে এম খালিদ বাবু মহোদয়ের প্রতি বিনীত অনুরোধ রাখছি এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য। সেই সাথে দেশের মহানমুক্তিযুদ্ধ ও দেশের নানা আন্দোলনে যাত্রাভিনেতাগন সব সময়ই অংশগ্রহন করেছে। কাজেই এ শিল্পকে রক্ষা করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল সহ সকলকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাই।
২০২১ সাল। অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা, সুখ-দুঃখের স্মৃতি, ঝড়-তুফানের মধ্য দিয়ে এখন ৫০ বছরের মুখোমুখি আমরা। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রান্তে দাঁড়িয়ে স্বভাবতই আমাদের জিজ্ঞাসা- কী হবে যাত্রাশিল্পের? এ সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ কী? করোনার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত যাত্রাশিল্পীরা আবার নতুন করে বাঁচতে চায়। নির্মাণ করতে চায় নতুন যাত্রাপালা। যে পালায় থাকবে বঙ্গবন্ধুর কথা, স্বাধীনতার কথা। এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় পৃষ্ঠপোষকতা। প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। ৫০ বছরের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, ব্যর্থতা হতাশা ধুয়ে মুছে নতুন অঙ্গীকারে শুরু হোক নতুন পথচলা। সম্মিলিত উচ্চারণ হোক যাত্রার জন্য চাই নতুন আলোকিত পথ। সামাজিক যাত্রাপথ, জয় হউক মানবতার, জয় হউক প্রাচীন সংস্কৃতির।
বীরেশ্বর চক্রবর্ত্তী,
সাবেক প্রধান শিক্ষক ও
প্রশিক্ষক (নাট্ক) বিভাগ
উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি
দুর্গাপুর নেত্রকোনা।