মহসিন মিয়া (খালিয়াজুরী) নেত্রকোনা থেকে : হাওরদ্বীপ নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে সিজারিয়ান অপারেশনের ব্যাবস্থা না থাকায় পশ্চাৎপদ যুগের মতো আজও প্রায় অপ্রতিরোধ্যই রয়ে গেছে প্রসব জটিলতার মা ও শিশুর মৃত্যু। প্রসব জটিলতায় সম্প্রতি (২২ জানুয়ারি) এক দিনেই মারা গেছে এখানকার ৩ জন।
ওরা হলেন – খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের ছোটহাটি গ্রামের হৃদয় মিয়ার স্ত্রী মাহিনূর আক্তার (১৬) ও তার সন্তান এবং তাদের পাশের কুড়িয়াহাটি গ্রামের কোহিনূর আক্তারের নবজাতক।
এসব মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ একেএম আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের মাঝে বেশির ভাগই অর্থনৈতিক দৈন্যতার শিকার ও অসচেতন। তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা একেবাই কম। এখানকার অসংখ্য গর্ভবতী মা স্বাস্থ্য ঝঁকিতে আছে। চেষ্টা চালিয়েও সহজে তাদেরকে নিয়মিত গর্ভকালীন চেকাপের আওতায় আনা যাচ্ছে না। গর্ভকালীন চেকাপ না নেয়া মায়েরাই প্রসব জটিলতায় ভোগেন বেশি। প্রসবকালীন সময়ে অত্যাধিক জটিলতা নিয়ে যখন তারা আসেন তখন অনেক ক্ষেত্রে অবস ও গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আর পরীক্ষা নিরিক্ষার যন্ত্রপাতি তথা সিজারিয়ান অপারেশনের প্রয়োজন হয়। নিয়ম অনুযায়ি সরকারি এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ওই দু’বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকার কথা। কিন্ত এখানে একটি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার থাকলেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় ওই অপারেশন করা সম্ভব হয় না। খালিয়াজুরীর কোথাও সরকারি-কিংবা বেসরকারি ভাবে সিজারিয়ান অপারেশনের কোন ব্যাবস্থা না থাকায় এখানে প্রসব জটিলতায় মা ও শিশু মৃত্যু অনেকটা অপ্রতিরোধ্যই রয়ে যাচ্ছে।
এ উপজেলায় প্রসবকালীন সময়ে মাত্র ২০ শতাংশ মা নিচ্ছেন প্রাতিষ্ঠানিক সেবা ও ৫০ শাতাংশ মা নিচ্ছেন দক্ষ ধাত্রীর সহায়তা। অন্য মায়েরা বাড়িতে অদক্ষ ধাত্রী দিয়েই করাচ্ছেন প্রসব। উপজেলায় মাতৃ মৃত্যুর হার লাখে ৩০০ জন। আর শিশু মৃত্যুর হার হাজারে ১২ জন বলে জানান ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
মা ও শিশু মৃত্যুর ভয়াবহতা সম্পর্কে স্থানীয়রা জানান, অন্য যে কোন উপজেলার চেয়ে এ উপজেলায় ওই মৃত্যুর হার অনেক বেশি হবে। কারন, উপজেলাটির কোথায়ও প্রসব জটিলতায় মা ও শিশু মৃত্যু রোধে সরকারি কিংবা বেসরকারি ভাবে গড়ে উঠেনি সিজারিয়ন অপারেশন কিংবা প্রয়োজনীয় কার্যকর তেমন কোন ব্যাবস্থা। দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন এ হাওরদ্বীপের অধিকাংশ গ্রামে মায়েদের প্রসবকালীন সময়ে জটিলতা দেখা দিলে স্রষ্ট্রার নাম নেয়া ছাড়া খুব একটা কোন বিকল্প থাকে না। উন্নত চিকিৎসা নিতে হলে এখান থেকে জেলা সদর কিংবা অন্যান্য স্থানে পাড়ি দিতে হয় অন্তত ৫০ কিলোমিটারের পথ। তাও আবার এখানে নেই এ্যাম্বুলেন্স অথবা দ্রুতগামী কোন যানবাহনের ব্যাস্থা।
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম জানান, এ সমস্যার বিষয়ে বিভিন্ন স্থানে বলা হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও যন্ত্রপাতির ও অভাব কখনো পূরন হচ্ছে না।