দিগন্ত ডেক্স : বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ জেলা ভোলার একটি উপজেলা মনপুরা।ভোলার বাকি সব কয়টি উপজেলার অবস্থান একই ভূখণ্ডে। কিন্তু মনপুরা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। প্রকৃতির এক অপার সম্ভাবনা রয়েছে এখানে।প্রতি বছর হাজারো কোটি টাকার ইলিশ কেনা-বেচা হয় এই দ্বীপে।মেঘনার করাল ঘ্রাসের ভাঙনের ফলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সমৃৃদ্ধশালী মনপুরা।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের চিন্তানিবাস এবং শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের স্মৃতিবিজড়িত মনপুরা মেঘনার তীব্র ভাঙনের ফলে ক্রমেই ছোট হয়ে যাচ্ছে এই দ্বীপের মানচিত্র ।প্রতিদিন ভিটে হারা হচ্ছে শত শত মানুষ।নদী ভাঙনের কারণে সহায় সম্বল হারিয়ে ভিটে হারা এসব অসহায় মানুষ আশ্রয় নিয়েছে কলাতলী চর, নতুন জেগে উঠা চরসহ বেড়িবাঁধের ঢালে কিংবা রাস্তার পাশে।
গত কয়েক বছর ধরে মেঘনার ভাঙনের ফলে ৪টি ইউনিয়নের অনেক প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মনপুরা ইউনিয়নের মাঝগ্রাম, কলাতলী, মনপুরা মৌজা ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।মেঘনা নদীর তীব্র স্রোতের কারণে ভেঙে কেবলই ভিতরে ঢুকছে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১নং মনপুরা ইউনিয়নের মাঝ গ্রাম, কলাতলী, আন্দিরপাড়, মনপুরা মৌজা এবং দর্শনীয় স্থান চৌধুরী ফিশারীজ ইতিমধ্যে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মনপুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,আন্দিড় পাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলাতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাছুয়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আন্দির পাড় মাধ্যমিক বিদ্যালয় নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানসহ ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় রামনেওয়াজ বাজারটি অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে।
২নং হাজির হাট ইউনিয়নের সোনার চর, চরজ্ঞান, দাসের হাট গ্রামের অধিকাংশ মেঘনার ভাঙ্গনে নদীর গর্ভে বিলীন । এখানেও দাসের হাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর কৃষ্ণপ্রসাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাদ্যগুদাম, পোস্ট অফিস, মসজিদ, মন্দির সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। উপজেলার প্রানকেন্দ্র হাজির হাট বাজার তীব্র ভাঙ্গনের ফলে কয়েকবার স্থানান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া ৩নং উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের মাষ্টার হাট সংলগ্ন পশ্চিম পাশের মেঘনা তীব্র ভাঙ্গনের ফলে ক্রমশই ছোট হয়ে যাচ্ছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উত্তর সাকুচিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, উত্তর সাকুচিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বহু গুরুত্বপুর্ন স্থাপনা যে কোন মুহুর্তে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
এছাড়াও ৪নং দক্ষিন সাকুচিয়া ইউনিয়নের রহমানপুর গ্রাম অধিকাংশ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মেঘনার তীব্র ভাঙ্গনে সাকুচিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন পূর্বপাশ থেকে ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে। মানুষের বসত ভিটা সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব। ভাঙন কবলিত এলাকার অসহায় মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে তারা আশ্রয় নিয়েছে বেড়ির ঢালে, রাস্তার পাশে। অনেকে মনপুরার চারপাশে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা বিভিন্ন চরে, কিংবা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে। মূলত চারিদিক থেকে মেঘনার অব্যাহত ভাঙনের ফলে ক্রমে ছোট হয়ে যাচ্ছে দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র,পর্তুগীজদের আবাসস্থল ও ভ্রমন পিপাসুদের তীর্থস্থান মনপুরা।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে মনপুরা দ্বীপের বাসিন্দা সেচ্ছাসেবী আনোয়ার কবির,শরীফ বিন হারুন, শাওন, বিরাজ দাস, হাছিব শান্ত বলেন, অপরুপ সৌন্দর্যের এই দ্বীপটি মেঘনার কবলে বিলীন হয়ে গেলে আমাদের আর কোনো পরিচয় থাকবে না।আমাদের জম্মস্থানের কোনো চিহ্ন ও নামও থাকবে না। মানচিত্র থেকে মনপুরা বিলিন হয়ে গেলে আমারা মনপুরাবাসী পরিচয়হীন হয়ে যাবো। সম্ভবনার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের চিন্তানিবাস এবং শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের স্মৃতিবিজড়িত মনপুরা উপজেলাকে টিকিয়ে রাখতে হলে অবিলম্বে টেকসই নদী ভাঙন রোধে ব্লকের কার্যক্রম হাতে নেওয়ার দাবি জানান বক্তারা।