দুর্গাপুর(নেত্রকোনা)প্রতিনিধি : নেত্রকোনার দুর্গাপুরে বিসমিল্লাহ্ হোমিও হলের সত্বাধীকারী ডাক্তার মো. কামরুল ইসলাম দেশের ক্রান্তিলগ্নে শিশু রোগীদের পাশে দাঁড়ালেন। কোন ফি না নিয়ে শিশুদের চিকিৎসা সহ ঔষধ বিতরণ করে যাচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে একজন সফল হোমিও চিকিৎসক হিসেবে উপজেলায় বিস্তার লাভ করেছে।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাতে ডা: কামরুল বলেন, ১৯৯৩ সনে এসএসসি, ১৯৯৫ তে এইচএসসি এবং ২০০০ সনে ডিএইচএমএস পাশ করে ডা. আলহাজ¦ নেওয়াজ দেওয়ান এর সাথে ময়মনসিংহ সদর, সুতারপাড়া, পরানগঞ্জ এবং সম্ভুগঞ্জ এলাকায় প্রাকটিস শুরু করেন। হোমিওপ্যাথিক ঔষধে তেমন কোন পাশর্^প্রতিক্রিয়া নেই, মূল্যেও অনেক সাশ্রয়ী, হাতের নাগালেই পাওয়া যায় এবং সর্বোপরি এর ভাল কার্যকারিতার কারণে ছোটকাল থেকেই হোমিও চিকিৎসার প্রতি আকর্ষিত হয় ডা: কামরুল ইসলাম। বিভিন্ন এলাকায় প্রাকটিস শেষে আত্মীয়তার বন্ধনে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় চলে আসেন ২০০০ সন থেকে শুরু করেন আপন মহিমায় হোমিও চিকিৎসা। সেবা দিচ্ছেন নানা জটিল ও কঠিন রোগের। এ যাবৎ তাঁর চিকিৎসার মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ ১৭টি নি:সন্তান দম্পতির কোলে হাসি ফুটিয়েছেন। তিনি মনে করেন, হোমিও চিকিৎসার দ্বারা অনেক জটিল রোগের সমাধান দেয়া সম্ভব, যদি সঠিক ভাবে তা প্রয়োগ করা যায়। তাঁর সফলতার কারনে তিনি পুরস্কারও পেয়েছেন বেশ কয়েকবার।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের জনসমষ্টির ৪০ ভাগ মানুষ এখনো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করে। অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও হোমিওপ্যাথিক সেবার অনুরাগী পেয়েছে এবং এর ক্রমবর্ধমান ধারা অব্যাহত রাখছে। বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের (বিএইচবি) অধিনে ৫২টি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে। এদের মধ্যে একটি সরকারী এবং বাকিগুলো প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ। ১৯৭২ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে হোমিওপ্যাথিক বোর্ড গঠনের মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটি কাঠামোর আওতায় আনা হয়। এরপরে ১৯৮৩ সালে হোমিওপ্যাথিক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক বোর্ড গঠন করে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও শিক্ষাব্যবস্থাকে করা হয় আরো সুগঠিত। এদেশে হোমিওপ্যাথির উপর দুই ধরনের কোর্স চালু আছে। একটি হল ‘ব্যাচেলর অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি’ বিএইচএমএস (BHMS), যার মান প্রায়ই এমবিবিএস (MBBS) ডিগ্রির সমান এবং অন্যটি ‘ডিপ্লোমা অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি ডিএইচএমএস (DHMS)। ডিপ্লোমা কোর্স এবং গ্রাজুয়েশন কোর্স যথাক্রমে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা পরিচালিত হয়। এদেশে অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক দেশের একটি বৃহৎ অংশের রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। হোমিওপ্যাথিক সিস্টেমের এবং ঔষধের উন্নয়নে নিয়োজিত আছেন অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা। যারা এই পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করে হোমিও সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে অবহিত করা এবং দীর্ঘমেয়াদী সম্মানের চাকুরি সুবিধা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার হিসেবে তিনি তার পেশা শুরু করেন এবং সমাজের সুবিধাবঞ্চিত লোকদের বিনামূল্যে সেবাদান চালিয়ে যান। যদিও একজন ডাক্তার হিসেবে তার সেরা অবস্থান থেকে দেখেছেন যে, এটি অনেক সম্ভাবনাময়ের রাস্তা। দীর্ঘদিন যাবত এই সেবায় নিয়োজিত থেকে তিনি বুঝতে পেরেছেন, হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারকে একাধারে পদার্থবিদ, রসায়নবিদ, জীবতত্ববিদ এবং মনোবিজ্ঞানীদের মতো হতে হয়। কিন্তু এগুলো শুধু মাত্র মেধাবীদের জন্যই সম্ভব। কিন্তু দেখা যায়, সকল শ্রেণি ও বয়সের মানুষ এই শিক্ষা নিতে ভর্তি হচ্ছেন হোমিও মেডিক্যাল কলেজ গুলোতে।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এদেশের সাধারন মানুষ জটিল ও দুরারোগ্য অসুখের খরচ বহন করার সক্ষমতা এখনো অর্জন করতে পারেনি। তবে এই অসুখগুলো অনেক কম খরচে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় করলে অনেক সময় বিস্ময়করভাবে কাজ করে। সে কারনে সবসময় হোমিওপ্যাথি শিক্ষার উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
হোমিও চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি দুর্গাপুর প্রেসক্লাবের সদস্যপদ অর্জন করে দৈনিক শ্বাশত বাংলা পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। সংস্কৃতিমনা হিসেবে ছোটবেলা থেকেই নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করে বহু সুনাম অর্জন করেছেন। এরই সুবাদে এলাকায় বিভিন্ন ধর্মীয় সভা, ওয়াজ মাহফিলে ইসলামী গজল ও হামদ্ নাত পরিবেশন করছেন প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশ ডিএইচএমএস, বি.ডিএ দুর্গাপুর উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
একজন ডাক্তার হিসেবে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এ পেশায় যুক্ত করেছেন। শুধু তাই নয় তাঁর পরিবারে ছোট ভাই ও বোনকে ডিএইচএমএস পাশ করিয়ে মানব সেবার কাজে লাগিয়েছেন। সর্বশেষ তাঁর আদরের মেয়েকেও মানব সেবায় আসার জন্য ডিএইচএমএস কৌর্সে ভর্তি করিয়েছেন। সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য শেষ নি:শ্বাস থাকা পর্যন্ত সেবা করে যেতে চান ডা: কামরুল। বিবাহিত জীবনে ২ ছেলে, ২ মেয়ে ভাই-বোন ও মা কে নিয়ে সুখে জীবন যাপন করছেন। তিনি বাকী জীবন মানুষের কল্যানে কাজ করে যেতে সকলের দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন।