হাবিব সরোয়ার আজাদ, সিলেট ব্যুরো চীপ : একাওরের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখায় বীর প্রতীক, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, শহীদ জননী, বীরাঙ্গনা ও শহীদ পরিবারের স্বজনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিজয় দিবসের প্রাক্কালে বিজয় দিবেসের শুভেচ্ছা উপহার পৌছে দেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি)।
দেশ স্বাধীনের পর এই প্রথম বারেরমত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের ব্যাতিক্রমধর্মী উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় থাকা বীর প্রতীক, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, শহীদ জননী, বীরাঙ্গনা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা উপহার পেয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা প্রশাসন ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শনিবার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা বিজয় দিবসের উপহার পৌছে দেন। এদিকে দিনভর ডিসির এমন ব্যাক্তিক্রমধর্মী উদ্যোগের ছবি ফেসবুৃকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক, জেলা প্রশাসন ও সরকারের ভুয়সী প্রশংসায় মেতে উঠেন। শনিবার সকালেই একাওরের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে সুনামগঞ্জ শহরে সম্মুখ সমরে সুনামগঞ্জের প্রথম শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের এর স্ত্রী রহিমা বেগমকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামে তাঁর বাড়িতে গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছাসহ বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।
এসময় পুলিশ সুপার জনাব মো, মিজানুর রহমান (বিপিএম) সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন নাহার রুমা, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। এরপর জেলা প্রশাসক,জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকবৃন্দ দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের রফিনগর গ্রামের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম (নুরু)’র মাতা শহীদ জননী বার্ধক্যজনিত কারণে শয্যাশায়ী (১১৫ বছর বয়সী) মোছাম্মৎ ফুলজান বিবিকে ফুলেল শুভেচ্ছাসহ বিজয় দিবসের উপহার সামগ্রী তুলে দিয়ে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
প্রসঙ্গত, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ নুরুল ইসলাম (নুরু) ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে ৪নং সেক্টরের সাব-সেক্টরে বীরত্বপুর্ণ যুদ্ধ করে দিরাইয়ের কুলঞ্জে পাক বাহিনীর সঙ্গে ভয়াবহ সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে বীর প্রতীক শহীদ আব্দুল নুর এর মেয়ে মোছা. হোসনে আরা বেগমকে মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের বাদে আব্দুল্লাহপুর গ্রামে তার নিজ বাড়ীতে গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছাসহ বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা উপহার পৌছে দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো: হারুন অর রশীদ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন নাহার রুমা।
শাল্লা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের মৃত মামুদ আলীর মেয়ে বীরঙ্গনা মোছা. জমিলা, আপ্তর আলীর মেয়ে মোছা. পেয়ারা বেগম, সুনাফর মিয়ার মেয়ে মোছা.মুক্তাবানু, পেরুয়া গ্রামের মৃত বাতের আলীর মেয়ে কুলছুম বিবি, দিরাই উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মৃত আজিম উল্লাহর মেয়ে আলিফ জান বিবি , পেরুয়া গ্রামের ব্রজেন্দ্র দাসের স্ত্রী, প্রমিলা দাসসহ তাঁদের প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছাসহ বিজয় দিবসের উপহার তুলে দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান।
বীর বিক্রম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি দাস (২৬ এপ্রিল ১৯৪৯ – ১৬ নভেম্বর ১৯৭১) এর বড় বোন ফুলু রানী রায়কে দিরাই উপজেলা টুক দিরাই গ্রামে গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছাসহ বিজয় দিবসের উপহার তুলে দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী,বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীরসহ অন্যান্যরা।
এছাড়াও মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সাথে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ ইদ্রীছ আলী (বীর প্রতীক)’র বাসভবনে শুক্রবার সন্ধায় গিয়ে সাক্ষাৎ করে ফুলেল শুভেচ্ছাসহ বিজয় দিবসের উপহার সামগ্রী তুলে দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।