শেখ শামীম, কলমাকান্দা (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি : নাম তার জান্নাতুল ফেরদৌস। ২১ মাস বয়সি কন্যা শিশু। গর্ভে থাকাকালীন সময়ে তার বাবা আব্দুস ছালাম বিগত ১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বরে হার্ট অ্যাটাক করে না ফেরার দেশে চলেন যান। ভূমিষ্ট হওয়ার পর বাবার মুখটি দেখেনি এ শিশুটি। চার বোনের মধ্যে সে সবার ছোট ও আদরের। পানি দেখলে ছুটে যায় এ শিশুটি। পানি তাকে প্রবল আকৃষ্ট করে। এমনই তথ্য জানান শিশুটির মা মোছা. মনোয়ারা বেগম। তিনি কলমাকান্দা উপজেলায় প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নূর রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের একজন শিক্ষিকা এবং উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের পাঁচকাঠা গ্রামের মৃত আব্দুস ছালামের স্ত্রী।
গত সোমবার দুপুরে জান্নাতুল ফেরদৌসের মা তাকে ঘরে রেখে ঘরের বারান্দায় চাল ঝাড়তে ছিল। এদিকে বাড়ির চারদিকে গত কয়েক দিনের টানা বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানিতে ভরপুর। শিশুটির মা’র হঠাৎ মনে হলো তার ছোট কন্যা শিশুটির কথা। ঘরের ভিতরে কোন সাড়া-শব্দ পাচ্ছে না। মা’র মনে টান পড়লো জান্নাতুল ফেরদৌস তো পানির প্রতি প্রবল ঝোঁক। সেই থেকে মা’র মনে দাগ কাটতে লাগল। যেই কথা সেই কাজ। অনেক খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে শিশুটিকে পাওয়া গেল রান্না ঘরের পিছনে বন্যার পানিতে ভাসমান অবস্থায়। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পথিমধ্যে উপজেলা সদরে পশ্চিম বাজারে পল্লী চিকিৎসক মো. নুর উদ্দিন দেখে বলেন শিশু মারা গেছে। শিশুর মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ মা, বোনসহ গ্রামবাসী। বাড়িতে চলছে শোকের মাতম, গোটা এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দূর-দুরান্ত থেকে আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্খী ও এলাকাবাসী শিশুটির পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে সকাল থেকেই পাঁচকাঠা গ্রামের মৃত আব্দুস ছালামের বাড়িতে ভীড় জমাতে শুরু করে। এক পর্যায়ে আব্দুস ছালামের বাড়ি শোকাহত মানুষের ঢলে পরিণত হয়।
এ নিয়ে গত শনিবার থেকে গত সোমবার পর্যন্ত তিনদিনে বন্যার পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার সকালে নিখোঁজের ৪২ ঘন্টার পর মাসুমা খাতুন (৭) নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। সে গত শনিবার দুপুর দেড়টা দিকে মাছুমার বাড়ীর পাশেই বগলা নদীর পাড়ে তারই সমবয়সী মামাতো ও চাচাতো বোনদের নিয়ে খেলা করছিল। খেলারত অবস্থায় নদীতে পড়ে গিয়ে় ডুবে যায়। সে নাজিরপুর ইউনিয়নের কুট্টাকান্দা গ্রামের মিজান উল্লাহ এর শিশু কন্যা এবং স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী।
এর আগে গত শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের চিনাহালা গ্রামে নজরুল ইসলামের ছেলে আলভিন (৫), অন্যান্য শিক্ষাথীদের সাথে স্কুলে বিস্কুট আনতে গিয়ে বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায়।