কলমাকান্দা (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি : নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ হতে যাচ্ছে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার গ্রামীন কাঁচা রাস্তা। গত ২০ ডিসেম্বর সকাল থেকে উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের জিগাতলা গ্রামের মন্ডলের বাড়ি হতে গোয়াতলা হয়ে রাধানগর গ্রাম পর্যন্ত এই রাস্তার মাটি কাটা কাজ শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার(২৪ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, লেংগুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে এলাকার প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রমে সকাল থেকে মাটি কাটার কাজ শুরু করেছেন। গ্রামীন এই কাঁচা রাস্তাটি নির্মান সম্পন্ন হলে ওই ইউনিয়নের পূর্ব জিগাতলা, রাধানগর, গোয়াতলা, শিবপুর, পেছাইয়া, জয়নগর, রাজনগর, মানিকপুর এ সকল গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দারা যাতায়াতের সুফল ভোগ করবেন। ছয় ফুট প্রসস্থ ও তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট উচ্চতায় রাস্তাটি নির্মান হলে যাতায়াত ব্যবস্থায় যোগ হবে এক নতুন মাত্রা। এ সকল গ্রামের বাসিন্দারা এতদিন বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় ক্ষেতের আইল দিয়ে যাতায়াত করতেন। রাস্তাটি নির্মানের ফলে রিকশা, ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা , মোটরবাইক নিয়ে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবেন। গ্রামের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে সুবিধা পাবেন। গ্রামের অসুস্থ রোগী ও গর্ভবর্তী নারীরাও চিকিৎসা যান চড়ে কেন্দ্রে আসতে পারবেন সংযোগ স্থল পাকা রাস্তা পর্যন্ত। গ্রাম বাসীরা অধীর আগ্রহের সহিত নিজেরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছেন।
স্বেচ্ছাশ্রমে কাজে আসা রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা মইজুদ্দিন, যুবক নিজাম উদ্দীন ও পূর্ব জিগাতলার আনোয়ারা আক্তারসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে নিজের রাস্তাটি নির্মাণে মাটি কাটার কাজ করছি। চেয়ারম্যানের অনুপ্রেরণায় আমরা এলাকাবাসী উদ্বুদ্ধ হয়ে মাটি কাটার কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। অতীতে এলাকাবাসী পায়ে হাঁটা ছাড়া যান বাহনে চড়ে যাতায়াত করতে পারছিল না। এখন থেকে গাড়ীতে করে অনেক গ্রামের মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা ও স্কুলে শিক্ষার্থীর বেশি উপকৃত হবে।
লেংগুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান ভূঁইয়া স্বেচ্ছাশ্রমে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন- জিগাতলা, রাধানগর, গোয়াতলা, শিবপুর, পেছাইয়া, জয়নগর, রাজনগর, মানিকপুর সহ অনেকগুলো গ্রামের মানুষ অবহেলিত ও তাদের চলাফেরা করতে হয় কষ্ট করে। সাড়ে তিন কি.মি. ধান ক্ষেতের আইল দিয়ে কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয় গ্রামবাসীদের। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এসকল এলাকার মানুষ বারবার অনেকের কাছে ঘোরাঘুরি করেও রাস্তাটি নির্মান করতে পারেনি। চেয়ারম্যান হওয়ার পর আমার কাছে অসংখ্য বার এ সকল গ্রামবাসীদের দাবী রাস্তা করে দেওয়ার জন্য। বরাদ্দ না থাকায় চেষ্টা করেও তাদের দাবী মেটাতে পারিনি। অবশেষে এলাকার নারী ও পুরুষদের উদ্বুদ্ধ করে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি নির্মানে কাজ শুরু করি। এ রাস্তা নির্মান হলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের মূল্য আগে ৫০০/ ১০০০ টাকা পেলে এখন আরও ১০০ টাকা বেশি পাবে এবং যানে করে গ্রামগুলোর বাসিন্দারা নির্বিঘ্নে যাতায়াত সুবিধা পাবে। এলাকাবাসীদের সহায়তায় স্বেচ্ছাশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আশা করি আগামী সাত দিনের মধ্যে রাস্তাটি নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।