দিগন্ত ডেক্স : দেশের করোনা সংক্রমণে পাহাড়েরও আতঙ্ক বিরাজ করছে। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে স্লান হয়ে গেছে পাহাড়িদের প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি। ২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশজুড়ে মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব দেখা দিলে গত বছরও পাহাড়িরা পালন করতে পারেনি বৈসাবি। অথচ করোনার আগে প্রতিবছর পাহাড়িরা বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে প্রস্তুতি নিতেন পুরাতনের গ্লানি মুছে নতুনকে আহ্বানে। নতুন বছরের আগমনে ঐতিহ্যবাহী ব্যয়বহুল খাদ্য পাঁজন,আট কড়ই,পাহাড়িদের স্ব স্ব ঐতিহ্যবাহি সহ খেলা ধুলার সকল প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন পাহাড়ি পল্লীসহ বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু এবারও ভেস্তে যাচ্ছে প্রাণের উৎসববের সবকিছু। ক্ষুদ্র বা সীমিত পরিসরে পালিত হওয়ার কথা থাকলেও তবে এ উৎসবের আমেজ থাকবে না বলে জানিয়েছেন আয়োজন কমিটির সংশ্লিষ্টরা।
পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা ধর্মীয় এই সামাজিক উৎসবকে বিভিন্ন নামে প্রাচীন থেকেই পালন করে আসছে । এখানে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীরা বৈসুক, মারমা জনগোষ্ঠীরা সাংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীরা বিসু ও বৃহত্তর চাকমা সম্প্রদায় একে বিঝু হিসেবে পালন করে আসছে। মুলত এই চার জনগোষ্ঠীর নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে সংক্ষেপে এটি বৈসাবি হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছে।
বৈসাবি উপলক্ষে রাঙ্গামাটিতে পাঁচ দিনের কর্মসূচী নেয়া হয়। ১০ এপ্রিল প্রতি বছরের মত বৈসাবির র্যালী বের করা হয় পৌর প্রাঙ্গন থেকে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী স্ব স্ব পোষাক পড়ে র্যালীতে অংশ গ্রহন করে। দেশের মানুষের কল্যাণে এবং সম্প্রীতির বন্ধনের জন্য নতুন বছরকে আহ্বান করে। থাকবে ঐতিহ্যবাহী গেংখুলী গান। পরদিন অতিথি আপ্যায়নের জন্য শুরু হবে বিভিন্ন রান্নার আয়োজন। ১২ এপ্রিল ভোর সকালে নিজেদের ঘরে মুল দরজায় ফুল দিয়ে সাঁজাবে পুরো বাড়ি এবং নদীতে ফুল ভাসিয়ে জল দেবতার কাছে শান্তির জন্য প্রার্থনা দিয়েই শুরু হবে ফুল বিঝু। ১৩ এপ্রিল পালন করা হবে মুল বিঝু এদিন একে অপরের বাড়িতে বৈসাবি পালনে অংশ গ্রহন করবে। ১৪ এপ্রিল বাংলা বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১লা বৈশাখকে বরণ করবে ভোরে মন্দিরে বা স্ব স্ব বাড়িতে বুদ্ধের প্রতিমূর্তির সামনে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং দেশের সকল প্রাণির সুখ শান্তি কামনায় প্রার্থনা করবে। বয়োজেষ্ঠ্যদের স্নান করিয়ে পূর্ন্য অর্জনে অংশগ্রহন করবে। পরে দুপুরের খাবার খেয়ে পালন করবে গজ্যাপজ্যা দিন। প্রাচিন ভাবেই রচিত মুল বিঝুর দিন বিভিন্ন বাড়িতে বিঝু উৎসব পালন শেষে এদিন বিছানায় গড়াগড়ি দিয়েই দিন কাটায় বলেই একে গজ্যাপজ্যা দিন বলে।
তিন পার্বত্য জেলার বিঝু, বৈসুক, সাংগ্রাই ও বিসু উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টুমনি তালুকদার জানান, করোনার প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি বিধি নিষেধ মান্য করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে ঘরোয়া পরিবেশে উৎসব পালন হবে। তবে আগের মতো জাঁকজমকভাবে কোন আয়োজন হবে না।
রাঙ্গামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সুরেশ ত্রিপুরা জানান, গত বছরও করোনার কারণে বিঝু উৎসব পালন করতে পারেননি। এবছরও করোনার প্রার্দুভাব বেড়ে যাওয়ায় সরকারি বিধি নিষেধ থাকায় এ সামাজিক উৎসব জাঁকজমকভাবে পালিত হবে না। তবে ঘরোয়াভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালিত হবে বলে তিনি জানান।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য বিপুল ত্রিপুরা জানান, সারাদেশে যে হারে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে,তার ব্যতিক্রম নয় পার্বত্য চট্টগ্রাম। দিন দিন দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে আবারো সারাদেশে লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সুতারাং, বিঝু উৎসব পালন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি সুশীল প্রসাদ চাকমা জানান, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পাহাড়ের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। করোনার কারণে গত বছরও পাহাড়ে বিঝু উৎসব পালিত হয়নি। কারণ করোনায় লকডাউন চলায় পাহাড়ের মানুষ অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং পাহাড়জুড়ে হতাশা বিরাজ করছে। তিনি আরো জানান, করোনার মধ্যে কোন উৎসব নয় বরং ঘরে থেকে সরকারি নির্দেশনা মেনে নিরাপদ থাকাই উত্তম।