দিগন্ত নিউজ ডেক্স : খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন বুধবার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বড়দিন উদযাপিত হচ্ছে। প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে এ দিনটি পালন করে থাকেন। দুই সহস্রাধিক বছর আগে এই শুভদিনে পৃথিবীকে আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট। বেথেলহেমের এক গোয়ালঘরে কুমারী মাতা মেরির কোলে জন্ম হয়েছিল যিশুর। খ্রিষ্ট ধর্মানুসারীরা বিশ্বাস করেন কোনো পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই যিশুখ্রিষ্টের জন্ম হয়। সেই অর্থে তিনি ঈশ্বরের পুত্র। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় সেখান থেকেই বিকশিত হয় মুক্তির এই আলোর দিশারী। যার আগমন পাপের আবর্তে নিমজ্জিত মানুষের অন্তরে এনে দেয় শান্তির পরশ।
উৎসবমুখর পরিবেশে দিনটি উদযাপন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা। বড়দিন উপলক্ষে দেশের সব চার্চ ও তারকা হোটেলগুলোকে ক্রিসমাস ট্রি, রঙিন বাতি, বেলুন আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। সেইসাথে খ্রিষ্টান পরিবারের বাসাবাড়ি একইভাবে সাজানো হয়েছে। এসব পরিবারগুলোতে নানা ধরনের পিঠা ও বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসীদের অনেকের ঘরেই বসানো হয়েছে প্রতীকী গোশালা। বেথেলহেমের গরিব কাঠুরের গোয়াল ঘরেই যিশুখ্রিষ্টের জন্ম। সেই ঘটনা স্মরণ করে বাড়িতে ধর্মীয় আবহ সৃষ্টি করতেই এটি করেন যিশুর অনুসারীরা।
বড়দিন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি. এম. কাদের পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা দেশের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সেই সাথে তাদের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। বড়দিন উপলক্ষে বুধবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এদিন বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই রাজধানীসহ খ্রিষ্টান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বড়দিনের আমেজ শুরু হয়। দিবসটি পালনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে মঙ্গলবার। রাজধানীর বিভিন্ন খ্রিষ্টান অধ্যুষিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চার্চ, গির্জাসহ বাসাবাড়িকে বিশেষভাবে সজ্জিত করা হয়েছে। এসব স্থাপনাগুলোতে শোভা পাচ্ছে যিশুর আগমনী তারকা।
রাজধানীর কাকরাইল সেন্ট মেরী ক্যাথিড্রাল চার্চ, তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জা, মিরপুর ব্যাপিস্ট চার্চসহ বিভিন্ন চার্চে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে গির্জার প্রবেশপথে সাজানো হয়েছে ক্রশ, শুভেচ্ছা কার্ডসহ উপহারসামগ্রী বিক্রির দোকান।
বড়দিন উপলক্ষ্যে রাজধানীর বেশ কিছু হোটেল রেস্টুরেন্ট ও তারকা হোটেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বড়দিনে এসব হোটেলে শিশুদের জন্য করা হয়েছে ক্রিসমাস কিডস পার্টিসহ নানা ধরনের খেলার আয়োজন। সেইসাথে থাকছে মজাদার সব খাবারের আয়োজন। এর মধ্যে কেক, পুডিং, কুকিস, চকলেটসহ মুখরোচক খাবার। এ আয়েজনে বাচ্চাদের জন্য থাকবে টয় ট্রেন, বাউন্সি, বল হাউস, জাদুসহ বিভিন্ন ধরণের খেলার ব্যবস্থা। আর এ আনন্দ আরো বাড়িয়ে দিতে হাজির হবেন সান্তা ক্লস ও তার নানা উপহার এবং নতুন নতুন চমক। এ উপলক্ষ্যে রাজধানীর গির্জাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যুগে যুগে ধর্ম প্রচারকগণ মানুষকে অন্ধকার পথ থেকে আলোর পথ দেখিয়েছেন। স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে ইহলৌকিক শান্তি ও পারলৌকিক মুক্তির জন্য সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত হতে সবাইকে প্রেরণা যুগিয়েছেন। মহান যীশুখৃষ্টও একইভাবে তাঁর অনুসারীদের অসত্য ও অন্যায়ের পথ পরিহার করে পরিশুদ্ধ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে উপদেশ দিয়েছেন। মহামানবদের প্রদর্শিত পথ অনুসরণই বয়ে আনতে পারে সার্বিক কল্যাণ। তিনি বড়দিনের সকল আনুষ্ঠানিকতার সাফল্য কামনা করেন।