দিগন্ত ডেক্স : গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বাবা ও সৎ মায়ের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে ওই শিক্ষার্থীর নানা টুঙ্গিপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে জানাযায়, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতি গ্রামের সৈয়দ রেজভী হাসানের মেয়ে কলেজ ছাত্রীর (১৬) উপর প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ২০ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে টয়লেটে ব্যবহারের হারপিক পান করে। অসুস্থ অবস্থায় তাকে প্রথমে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ২২ অক্টোবর মাঝ রাতে তাকে খুলনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে রেফার করা হয়। শারীরিক অবস্থার একটু উন্নতি হলে ২৩ অক্টোবর ওই শিক্ষার্থীকে পুনরায় টুঙ্গিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করা হয়।
ওই শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায় তার ভাগ্যে পতিত এক নির্মম ও অপ্রিয় বাস্তবতা সম্পর্কে। সে জানায়, তারা দুই ভাই বোন, তার মা আনজুমান আরা ঘোপের ডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। মায়ের উপর বাবা বিভিন্ন সময়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন। আর এসব কারণে মা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। গত ২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মা মারা যায়।
তীব্র অসহায়ত্ব আর কষ্টভরাক্রান্ত জড়িত কন্ঠে ওই শিক্ষার্থী আরো জানায়, মায়ের মৃত্যুর ৪০ দিনও ধৈর্য ধরেননি বাবা। এরই মধ্যে আবার বিয়ে করেন তিনি। আর এরপর থেকেই শুরু হয় বাবা ও সৎ মায়ের নিয়মিত অত্যাচার। উঠতে বসতে চলে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের স্টীমরোলার।
ওই শিক্ষার্থীর খালা আজমীরা খানম জানান, আমার ভাগ্নিকে গোপালগঞ্জ থেকে খুলনা রেফার করলে, ভগ্নিপতির কাছে কোনো টাকা পয়সা নেই বলে জানিয়ে দেয়। বাবা ও সৎ মা অসুস্থ্য মেয়ের সামনে তো যেতে চায়নি, উল্টো বলেছে মেয়ে নাটক করছে।
শিক্ষার্থীর নানা আবুল বসার সরদার বলেন, আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পর জামাই কোর্টে তার দুই সন্তানের অভিভাবকত্বের মামলা করলে কোর্ট তাকে অভিভাবকত্ব প্রদান করেন। অভিভাবকত্ব পেয়ে আমার মেয়ের পেনশনের প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা জামাই নিজের হেফাজতে রাখে। তবে নাতি, নাতনী তার বাবার কাছে থাকতে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে আমার বাড়িতে নিয়ে রাখি। মাঝে মধ্যে তারা টুঙ্গিপাড়ায় বাবার কাছে গিয়ে থাকত।
কলেজ ছাত্রীর বাবা সৈয়দ রেজভী হাসান মুঠো ফোনে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার মেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন। এটাই প্রথম নয়, তার মায়ের মৃত্যুর পর একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।
টুঙ্গিপাড়া থানার অফিসার ইন চার্জ এ. এফ. এম. নাসিম বলেন, ওই কলেজ ছাত্রীর নানার একটি অভিযোগ পেয়েছি। এটি একটি পারিবারিক বিষয়। ইতোমধ্যে তদন্তও শুরু হয়েছে।